অর্থনীতি ডেস্ক
আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা। এই বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) পরিচালিত ডেটা সেন্টার নির্মাণ, অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জুকারবার্গ সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক নৈশভোজে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে এই বিনিয়োগ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। জুকারবার্গ বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চলেছি। এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যাতে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত ও কম্পিউটিং চাহিদা মোকাবিলায় আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে পারি।”
প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে একাধিক এআই ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। মেটার পরিকল্পনা অনুযায়ী, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে একটি নতুন ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হবে, যা কোম্পানির ২৯তম বৈশ্বিক ডেটা সেন্টার হিসেবে গড়ে উঠবে। এছাড়া লুইজিয়ানায় বৃহত্তম প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেটা ব্লু আউল ক্যাপিটালের সঙ্গে ২৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত মেটার আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অবকাঠামো-সংক্রান্ত বিনিয়োগের কারণে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ব্যয় আগামী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত চাহিদা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি এখন থেকেই তাদের কম্পিউটিং সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
মার্ক জুকারবার্গ বলেন, “আমরা আমাদের কম্পিউটিং ক্ষমতা বাড়াচ্ছি এবং এআই অবকাঠামো উন্নয়নে আগাম বিনিয়োগ করছি, যাতে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি।”
বিশ্লেষকদের মতে, মেটার এই ব্যাপক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটিকে বৈশ্বিক এআই প্রতিযোগিতায় শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাত ও অর্থনীতিতে এটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিনিয়োগ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশটিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং প্রযুক্তি-নির্ভর অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, এআই অবকাঠামো উন্নয়নে মেটার আগ্রহ মূলত কোম্পানিটির দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত রূপান্তর কৌশলের অংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সীমানা পেরিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং ডেটা-চালিত সেবায় আরও গভীরভাবে যুক্ত হচ্ছে।
মেটার এই নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই পদক্ষেপ এআই গবেষণা, তথ্যপ্রক্রিয়াকরণ ও ডেটা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করবে।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বিনিয়োগের এই বিশাল অঙ্কটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি অবকাঠামোতে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে শুধু মেটা নয়, বরং সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ শিল্প এবং প্রযুক্তি সেবা খাতও উপকৃত হবে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মেটার এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শুধু এআই বাজারে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে ডিজিটাল অর্থনীতির ভবিষ্যত রূপায়ণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রযুক্তি শিল্পে এই বিনিয়োগ নতুন কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিকাশেও সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

