অর্থনীতি ডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে চলমান মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা (শাটডাউন) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে অতিরিক্ত বিনিয়োগজনিত উদ্বেগের কারণে শুক্রবার বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশিরভাগ প্রধান সূচকই এদিন পতনের মুখে পড়ে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এআই খাতে বিনিয়োগকে “অতিরিক্ত” বলে মনে করার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তিই ভবিষ্যতের পথনির্দেশক হবে।
শুক্রবার দিনের লেনদেন শেষে মার্কিন শেয়ারবাজারে মিশ্রধারা দেখা যায়। ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হলেও প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক কম্পোজিট সূচক নিম্নমুখী অবস্থায় দিন শেষ করে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মূল্যায়ন নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভেন্টুরা ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা টম ক্যাহিল বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারের প্রধান উদ্বেগ হচ্ছে ডেটা সেন্টার ও এআই অবকাঠামোয় বিনিয়োগের তাৎক্ষণিক লাভজনকতা নিয়ে অনিশ্চয়তা। একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সরকারি অচলাবস্থা অর্থনীতির ওপর স্পষ্ট চাপ সৃষ্টি করছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, শ্রমবাজারে শীতলতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং চলমান অনিশ্চয়তা নিয়োগ কার্যক্রমে স্থবিরতা আনতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এআই খাতে বিনিয়োগ বাবলের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “না, আমি এআই-কে সমর্থন করি। এটি অত্যন্ত সহায়ক প্রযুক্তি এবং ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। আমরা এই খাতে বৈশ্বিক নেতৃত্বে আছি।”
শেয়ারবাজারের অস্থিরতার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী সরকারি অচলাবস্থাও বড় ভূমিকা রাখছে। সিনেটে ডেমোক্র্যাট নেতা চার্লস শুমার সরকারি কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য একটি সংশোধিত প্রস্তাব পেশ করেন, যদিও রিপাবলিকান নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেন। বিশ্লেষকদের মতে, অচলাবস্থা যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, অর্থনীতির ক্ষতি তত বাড়ছে।
বি. রাইলি ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান বাজার কৌশলবিদ আর্ট হোগান বলেন, “অচলাবস্থা যত বেশি দীর্ঘ হবে, এর ক্ষতিকর প্রভাব তত গভীর হবে। বিনিয়োগকারীরা এখন বুঝতে পারছেন, এটি কেবল প্রশাসনিক সংকট নয়, বরং প্রকৃত অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।”
ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের এক সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, নভেম্বরে মার্কিন ভোক্তাদের আস্থা সূচক অক্টোবরের তুলনায় কমেছে। সমীক্ষার পরিচালক জোয়ান সু জানান, ফেডারেল সরকারের অচলাবস্থা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলায় জনগণের মধ্যে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নেতিবাচক প্রত্যাশা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর আগের দিন প্রকাশিত চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাস নামের একটি আউটপ্লেসমেন্ট ফার্মের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরিচ্যুতির হার ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই তথ্য শ্রমবাজারের দুর্বল অবস্থার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক সূচক প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে, ফলে বিনিয়োগকারীরা বেসরকারি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছেন। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন প্রশাসনের (এফএএ) আংশিক কার্যক্রমের কারণে শুক্রবার শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়। জানা গেছে, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলাররা পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করছেন, যা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও একই ধরনের চাপ লক্ষ্য করা যায়। চীনের অক্টোবরে রপ্তানি আট মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো হ্রাস পাওয়ায় বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক এফটিএসই ১০০ সূচকও পতনের মুখে পড়ে; বিশেষ করে রাইটমুভ এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মালিক আইএজি-এর শেয়ার মূল্যে উল্লেখযোগ্য হ্রাস বাজারকে প্রভাবিত করে।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন সরকারি অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান না হলে বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি এআই খাতে অতিবিনিয়োগের আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থানে রাখবে।