আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সন্ত্রাসবাদের কালো তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহারের একদিন পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল শারা। আগামীকাল ১০ নভেম্বর তিনি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রোববার (৯ নভেম্বর) সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সানার বরাতে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট আল শারা সরকারি বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত কপ-৩০ জলবায়ু সম্মেলনে যোগদানের পর শনিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা দেন।
ওয়াশিংটনে আল শারার এই সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি সিরিয়াকে “সন্ত্রাসবাদের কালো তালিকা” থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র টমি পিগট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট আল শারার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু দাবিতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো নিখোঁজ মার্কিন নাগরিকদের সন্ধানে সহযোগিতা এবং সিরিয়ার মজুদ রাসায়নিক অস্ত্র সম্পূর্ণ নির্মূলের পদক্ষেপ গ্রহণ। তিনি বলেন, “বাশার আল আসাদের পতনের পর এবং আসাদ সরকারের অর্ধশতাব্দীর দমননীতি থেকে বেরিয়ে এসে সিরীয় নেতৃত্ব যে অগ্রগতি দেখিয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো তারই স্বীকৃতি।”
বিশ্লেষকদের মতে, সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে একটি নতুন দিক নির্দেশ করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি এবং মানবিক সংকটে জর্জরিত ছিল। সাম্প্রতিক এই অগ্রগতি দেশটির পুনর্গঠন ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
তবে, ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। কিছু মার্কিন সিনেটর ও মানবাধিকার সংগঠন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, সিরিয়ার বর্তমান প্রশাসনের প্রতি আগাম কূটনৈতিক উষ্ণতা দেওয়া মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে চাপ কমিয়ে দিতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে, সিরিয়ার নতুন সরকার বাশার আল আসাদের পতনের পর গঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল শারা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লীগভুক্ত কয়েকটি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু করেছেন।
আগামীকাল হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সিরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা, এবং সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষত, সিরিয়ার অভ্যন্তরে চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়া ও শরণার্থী পুনর্বাসন উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ভূমিকা রাখবে—তা নিয়েও বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো ধারণা করছে।
এ সফরের মাধ্যমে সিরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন কূটনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি আলোচনায় উভয় পক্ষ পারস্পরিক আস্থা গড়ে তুলতে পারে, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।