বিনোদন ডেস্ক
তামিল সিনেমার প্রথম সুপারস্টার হিসেবে খ্যাত এম. কে. ত্যাগরাজা ভাগবথার (এমকেটি) এক সময় দর্শকদের কাছে দেবতার মতো পূজিত ছিলেন। কিন্তু তাঁর সেই উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক চাঞ্চল্যকর অপরাধের কাহিনি—এক সাংবাদিক হত্যার অভিযোগ, যা ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
১৯৩৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পাভালক্কোডি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এমকেটির অভিনয়জীবন শুরু হয়। পরবর্তী বছরগুলোতে ‘চিন্তামণি’ (১৯৩৭), ‘অম্বিকাপতি’ (১৯৩৭) ও ‘হরিদাস’ (১৯৪৪)-এর মতো একাধিক সফল ছবি তাঁকে তামিল চলচ্চিত্রের সর্বাধিক জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাঁর অভিনীত ‘হরিদাস’ ছবিটি মাদ্রাজের এক থিয়েটারে টানা ১১৪ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়—যা সেই সময়ে এক অভূতপূর্ব রেকর্ড ছিল। এমকেটির জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে, দর্শকরা তাঁকে কেবল অভিনেতা নয়, বরং এক প্রতিমারূপে শ্রদ্ধা করতেন।
কিন্তু এই জনপ্রিয়তার আড়ালে জমে উঠেছিল বিতর্ক। বিনোদন সাংবাদিক সি. এন. লক্ষ্মীকান্তন তাঁর লেখার মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিভিন্ন অভিনেতা ও প্রযোজকের ব্যক্তিগত জীবনের গোপন তথ্য, গসিপ ও অনুমাননির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করতেন। এতে শিল্পী মহলের অনেকেই ক্ষুব্ধ হন। বিশেষ করে এমকেটি ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সাংবাদিকের প্রতিবেদনে নিজেদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন।
১৯৪৪ সালের ৮ নভেম্বর রাতে মাদ্রাজে এক নৃশংস ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। সি. এন. লক্ষ্মীকান্তনকে শহরের এক সড়কে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুর আগে তিনি পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, এই হামলার পেছনে এম. কে. ত্যাগরাজা ভাগবথার, কৌতুক অভিনেতা এন. এস. কৃষ্ণান এবং প্রযোজক এস. এম. শ্রীরামুলু নাইডুর নাম জড়িত।
পুলিশি তদন্তে উঠে আসে পরিকল্পিত হত্যার প্রমাণ। তদন্তে দেখা যায়, এমকেটি সাংবাদিক হত্যার জন্য প্রায় ২,৫০০ টাকা প্রদান করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠে। তদন্তের সূত্র ধরে প্রমাণ হিসেবে একটি চিঠি এবং সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে এমকেটিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়। ১৯৪৫ সালে আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন, যদিও আপিলের পর প্রায় ৩০ মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পান।
কারামুক্তির পর এমকেটি আবার চলচ্চিত্রে ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর খ্যাতি তখন ম্লান। যে দর্শক একসময় তাঁকে পূজা করত, সেই দর্শক আর তাঁকে আগের মতো গ্রহণ করেনি। পরবর্তী জীবনে তিনি আর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারেননি।
তামিল সিনেমার ইতিহাসে এম. কে. ত্যাগরাজা ভাগবথার একদিকে যেমন প্রথম ‘সুপারস্টার’-এর মর্যাদা অর্জন করেন, অন্যদিকে তাঁর নাম জড়িয়ে যায় এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে। তাঁর জীবন ও পতনের গল্প আজও দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনের জন্য এক সতর্কবার্তা হিসেবে স্মরণীয়—খ্যাতি ও ক্ষমতার উজ্জ্বল আলো কখনও কখনও গভীর অন্ধকারও লুকিয়ে রাখে।