অর্থনীতি ডেস্ক
মার্কিন অর্থনীতির দুর্বল সূচক প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার মূল্য আবারও উর্ধ্বমুখী হয়েছে। সোমবার (১০ নভেম্বর) স্পট গোল্ডের দাম আউন্সপ্রতি ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,০৫৩ দশমিক ৪০ ডলারে। একই দিনে ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য মার্কিন সোনা ফিউচারের দামও বৃদ্ধি পেয়ে আউন্সপ্রতি ৪,০৬২ দশমিক ৪০ ডলারে পৌঁছায়।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হওয়া এবং ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সম্ভাব্য সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে ঝুঁকতে উৎসাহিত করছে। কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সোনার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, “বাজারে এখন ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ডিসেম্বর মাসে ফেড সুদের হার হ্রাস করতে পারে, যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।”
অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। অক্টোবর মাসে দেশটির কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে, বিশেষত সরকারি ও খুচরা খাতে। অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির বিস্তারের কারণে কর্মী ছাঁটাইও বেড়েছে। এর পাশাপাশি ভোক্তা আস্থা প্রায় তিন বছর তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। সম্প্রতি টানা ৪০ দিনের সরকারি শাটডাউন দেশটির সামষ্টিক অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
বাজার বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম সিএমই ফেডওয়াচ টুল-এর তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশ মনে করছেন যে, ফেডারেল রিজার্ভ ডিসেম্বর মাসে সুদের হার কমাতে পারে। সাধারণত সুদের হার কমলে সোনার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়, কারণ এটি মুনাফা-বিহীন সম্পদ হয়েও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত। সুদের হার হ্রাসের ফলে মার্কিন ডলারের মান দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
এদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম সোনাভিত্তিক এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) এসপিডিআর গোল্ড ট্রাস্ট জানিয়েছে, গত শুক্রবার পর্যন্ত তাদের সোনার মজুদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০৪২ দশমিক ০৬ মেট্রিক টনে, যা আগের দিনের তুলনায় সামান্য বৃদ্ধি। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাজারে সোনার চাহিদা বৃদ্ধির একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।
সোনার পাশাপাশি অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দামও বেড়েছে। সোমবার স্পট সিলভার ১ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আউন্সপ্রতি ৪৯ দশমিক ১৮ ডলারে লেনদেন হয়। প্লাটিনামের দাম ১ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি ১,৫৬৫ দশমিক ৩৬ ডলারে। একই সময়ে প্যালাডিয়ামের দাম ০ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ১,৩৮৯ দশমিক ৯৪ ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপের মধ্যে সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। ফেডারেল রিজার্ভ আগামী ডিসেম্বর মাসে নীতি সুদের হারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপরই পরবর্তী সময়ে সোনার বাজারের দিকনির্দেশনা অনেকাংশে নির্ভর করবে।