আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার এক মাস পরেও মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তর (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, সীমিত প্রবেশপথ, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানায়, জাতিসংঘের মুখপাত্র ফারহান হক সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যুদ্ধবিরতির এক মাস পরেও গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির জন্য নেওয়া উদ্যোগগুলো ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বাধা, সীমিত প্রবেশপথ, এবং অনিরাপদ পরিস্থিতির কারণে কঠিন হয়ে পড়ছে।”
ফারহান হক আরও জানান, কিছু অঞ্চলে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা দলকে প্রতিবার চলাচলের জন্য ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হচ্ছে। তিনি জানান, “গত সপ্তাহে আটটি ত্রাণ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, তবে কেবল দুটি ক্ষেত্রে ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে অনুমতি দিয়েছে। বাকি চারটি প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয় এবং একটি প্রচেষ্টা অনুমতি পাওয়ার জন্য ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল।”
ফারহান হক বলেন, “চলমান প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থাগুলো সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য সব সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।” তবে তিনি আরও বলেন, “গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেই আসছে। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আরও বেশি সীমান্তপথ খুলে দেওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা তা করেনি।”
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সরঞ্জাম এবং ওষুধের অভাব রয়েছে।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো আরও সতর্ক করেছে যে, যুদ্ধবিরতি অনুযায়ী সহায়তা আরও দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছানো উচিত, কিন্তু ইসরায়েলি সীমাবদ্ধতা ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। মানবিক সহায়তার দ্রুত প্রবাহ না হলে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে, যা আরো মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের প্রতি সহায়তা প্রবাহে আরও অবাধ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে, যাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় বেঁচে থাকা মানুষের জন্য প্রাথমিক সহায়তা নিশ্চিত করা যায়।