বাংলা সিনেমার ঐতিহাসিক পর্দা মানেই অনেক নায়ক-নায়িকার সম্পর্কের নানা গল্প। এক দিকে যেমন রয়েছে বন্ধুত্ব, প্রগাঢ় সম্পর্ক, অন্যদিকে কিছু মর্মান্তিক ঘটনারও উদাহরণ রয়েছে, যা ইতিহাসে রয়ে গেছে। এমন একটি ঘটনার কথা আজও ভুলতে পারেননি অনেক সিনেমাপ্রেমী, যা ঘটেছিল ১৯৬৬ সালে ‘মমতা’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, যেখানে ধর্মেন্দ্র ও সুচিত্রা সেন একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন।
সুচিত্রা সেন ছিলেন এক যুগের মহাতারকা। তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল অত্যন্ত গোপনীয় এবং তিনি পর্দায় এবং বাস্তবে ছিলেন শালীনতা, সৌম্যতা এবং শ্রদ্ধার প্রতীক। তবে, ‘মমতা’ সিনেমার শুটিংয়ে ধর্মেন্দ্র যা করেছিলেন, তাতে সুচিত্রা সেনের সম্মানিত ভাবমূর্তি কিছুটা ভেঙে গিয়েছিল।
‘মমতা’ ছবির শুটিং চলাকালে, একটি গানের দৃশ্যে ধর্মেন্দ্র এবং সুচিত্রা সেন একসঙ্গে অভিনয় করছিলেন। সেই দৃশ্যে হঠাৎ ধর্মেন্দ্র, সুচিত্রার পিঠে একটি চুমু খেয়ে ফেলেন। এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর, সুচিত্রা সেন যেমন অভিভূত হন, তেমনই তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধও হন। সেই সময় ধর্মেন্দ্র, যে আগেই সুচিত্রাকে মনের কোণে পছন্দ করতেন, সুতরাং রোমান্টিক দৃশ্যের মাঝে উত্তেজনার বশে এটি ঘটে গিয়েছিল। তবে সুচিত্রা সেনের প্রতিক্রিয়া ছিল একেবারেই আলাদা।
ধর্মেন্দ্র তার নিজের ভাষায় বলেছিলেন, “আমি ‘দেবদাস’ ছবিতে প্রথম সুচিত্রা সেনকে দেখেছিলাম। তখন থেকেই তাকে মনে-মনে ভালো লাগত। ‘মমতা’ ছবির শুটিংয়ের সময় দার্জিলিংয়ে আমরা একটি গানের দৃশ্যে শুটিং করছিলাম। হঠাৎ করেই, আমি তার পিঠে চুমু খেয়েছিলাম। সুচিত্রা ম্যাডাম খুবই রেগে গিয়েছিলেন। আজও আমি সেই দিনটা ভুলতে পারি না।”
ধর্মেন্দ্র যেভাবে এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন, তাতে স্পষ্ট যে তিনি মোটেও খারাপ কিছু ভাবেননি, কিন্তু সুচিত্রা সেনের প্রতিক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তার কাছে এটি ছিল এক ধরনের অসম্মান। তিনি যথেষ্ট রেগে গিয়ে ধর্মেন্দ্রকে বলেন, “আমাকে না বলে, আমার সঙ্গে আলোচনা না করে আপনি এটা কী করলেন, ধর্মেন্দ্রবাবু?”
ধর্মেন্দ্র, যে সুচিত্রা সেনকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন, তার এই অসম্মানিত হওয়ার ঘটনা তাকে খুবই লজ্জিত করেছিল। পরবর্তীতে তিনি সুচিত্রা সেনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এ ঘটনায় কেবল সুচিত্রা সেনই নয়, পুরো শুটিং সেটেই এক ধরনের অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছিল। এই চুমুর দৃশ্যটি, যা গানের অংশ ছিল, ছবির চূড়ান্ত কাটে ফেলে দেওয়া হয়। এর পরেও ধর্মেন্দ্র নিজেই মনে করতেন যে, এই ঘটনা তার জন্য একটি শেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এটি ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা যেখানে দুটি প্রজন্মের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র—ধর্মেন্দ্র ও সুচিত্রা সেন—এর সম্পর্কের সূক্ষ্মতা এবং প্রফেশনালিজমের একটি মর্মস্পর্শী দৃষ্টান্ত। যদিও ধর্মেন্দ্র একটি অসাবধানতায় সুচিত্রা সেনের গোপনীয়তা ভেঙেছিলেন, তবে তার পরে তিনি মহানায়িকার কাছে ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন।
এ ঘটনা সিনেমার ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।