আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অক্টোবরে প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পূর্ণ হওয়া জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী দেশ ও মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে গাজা সহ বিভিন্ন সংঘাত ও সংকটে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়া, পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের এজেন্ডাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, সংস্থার উপর সমালোচনার ঝড় তোলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাতিসংঘ না থাকলে বৈশ্বিক শরণার্থী সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ এবং স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তায় গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা তৈরি হবে।
জাতিসংঘ ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংস্থা শান্তি রক্ষা, মানবিক সহায়তা, আন্তর্জাতিক আইন, কূটনীতি ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে কিছু ঘটনা যেমন রুয়ান্ডা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও দারফুরে গণহত্যা, এবং গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতারোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া, সংস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফিউজি স্টাডিজ সেন্টারের গবেষণা সহযোগী জেফ ক্রিসপ বলেন, জাতিসংঘ না থাকলে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ কোটি শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। তিনি সতর্ক করেন, সহায়তা কমে গেলে শরণার্থীরা শহুরে অঞ্চলে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির মাধ্যমে বেঁচে থাকতে বাধ্য হবে, যা স্থানীয় সম্পদ ও পরিষেবায় চাপ সৃষ্টি করবে। এছাড়া রাষ্ট্রগুলো শরণার্থীদের জন্য আর কোনো জবাবদিহি বহন করবে না।
আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যের আইনজীবী জিওফ্রে নাইস উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের বিলুপ্তি হলেও আন্তর্জাতিক আইন অক্ষত থাকবে। এনজিও ও অ-রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো এখনো জাতীয় আদালতের মাধ্যমে নেতাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে। তবে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব ক্রমবর্ধমানভাবে রাষ্ট্র, করপোরেশন ও সুশীল সমাজের ওপর নির্ভর করবে।
জাতিসংঘের সাবেক সহকারী মহাসচিব রমেশ ঠাকুর বলেন, শান্তি রক্ষায় সংস্থার ভূমিকা বৈধতা প্রদানে সীমাবদ্ধ। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায় না। তাই সংস্থার অনুপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষায় একতরফা পদক্ষেপ প্রায়ই দখলদারিত্বের আকার নেবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সম্পর্কেও সাবেক প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন বলেন, ডব্লিউএইচওর অব্যাহত কার্যক্রম ছাড়া নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ওষুধ ও টিকার অনুমোদনের কাঠামো নেই, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ শূন্যতা তৈরি করবে। মহামারি নজরদারি ও প্রতিরোধেও এই সংস্থার অবদান অপরিহার্য।
নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস টমাস বলেন, জাতিসংঘ ও এর সহযোগী সংস্থা যেমন ইউএসএআইডি বিশ্বব্যাপী কল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করে, যা একক সরকার বা ছোট সংস্থার পক্ষে পূরণযোগ্য নয়। জাতিসংঘ না থাকলে এই শূন্যস্থান স্থানীয় এবং ছোট সংস্থার মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হলেও তা খণ্ডিত ও অনিশ্চিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা একমত, সংস্থার অব্যাহত কার্যক্রম না থাকলে বৈশ্বিক শরণার্থী সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ এবং শান্তি রক্ষায় শূন্যতা তৈরি হবে। একই সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতি ও মানবিক সহায়তায় প্রভাবিত দেশগুলোকে স্বাধীনভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে, যা বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে।
জাতিসংঘের এই অভাবনীয় ভূমিকা এবং সংস্থার কার্যকারিতা উন্নত না হলে, বিশ্ব একটি নতুন বৈশ্বিক বাস্তবতার মুখোমুখি হবে, যেখানে স্থানীয় ও অ-রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের গুরুত্ব ক্রমবর্ধমান হবে, কিন্তু তা সবসময় পূর্ণতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবে না।