অর্থনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশে রপ্তানির তুলনায় দ্রুতগতিতে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি সম্প্রতি আরও বিস্তৃত হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবও ঋণাত্মক অবস্থায় পৌঁছেছে। খাত সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন যে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে জাতীয় মুদ্রা টাকার মান ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ব্যালান্স অব পেমেন্ট প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছর ২০২৫-২৬-এর প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশ থেকে এক হাজার ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। একই সময়ে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলার, ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৫৭১ কোটি ২০ লাখ ডলার। তুলনামূলকভাবে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৪৬৪ কোটি ডলার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত ছিল। তবে চলতি অর্থবছরে এটি ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ঘাটতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। গত বছরের একই সময়ে যেখানে ১৪৮ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল, সেখানে চলতি প্রান্তিকে ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্য আমদানি বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রমজান শুরু হওয়ায় এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট) আগে থেকেই খোলা হয়েছে। ফলে রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেড়ে চলতি হিসাব ও বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, সব ধরনের আমদানি নেতিবাচক নয়। উৎপাদনমুখী কাঁচামালও আমদানি হয়েছে, যা পরবর্তীতে রপ্তানি বা দেশীয় বাজারে বিক্রির মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবাসীরা ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। গত বছর একই সময়ে রেমিট্যান্স ছিল ৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই)ও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি প্রান্তিকে এফডিআই এসেছে ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে শেয়ারবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৫০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ হয়েছিল, কিন্তু চলতি প্রান্তিকে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২০ লাখ ডলারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ এবং টাকার মানে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তবে উৎপাদনমুখী কাঁচামালের আমদানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।