বিনোদন ডেস্ক
আজ, ১৩ নভেম্বর, বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী, শব্দের জাদুকর এবং কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ৬৩ বছরের বর্ণিল জীবন কাটিয়ে ২০১২ সালে তিনি চলে যান না-ফেরার দেশে, তবে তার সৃষ্টিকর্ম আজও বাংলা সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং নাটক জগতে জীবন্ত এক স্মৃতিরূপে টিকে আছে।
হুমায়ূন আহমেদকে ‘নন্দিত কথাসাহিত্যিক’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়, কারণ তিনি তার লেখনির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন দিশা দিয়েছেন। তার গল্প ও উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো উদ্ভাসিত হয়েছে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ তাকে সাহিত্যিক মহলে পরিচিতি এনে দেয় এবং তাকে সাহিত্য জগতে সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করতে সহায়তা করে। এরপর তিনি প্রায় তিন শতাধিক গ্রন্থ রচনা করে বাংলা সাহিত্যকে এক অমর দান উপহার দেন।
হুমায়ূন আহমেদ শুধু সাহিত্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; চলচ্চিত্র ও নাটকেও তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তার হাতে সৃষ্ট কালজয়ী চরিত্র যেমন: বাকের ভাই, মিসির আলী, এবং হিমু, বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিরকাল অমলিন হয়ে থাকবে। তার রচিত ও নির্মিত অসংখ্য নাটক আজও দর্শকপ্রিয় এবং সাহিত্যিক ও সৃষ্টিশীলতার মানদণ্ড হিসেবে গৃহীত হয়।
১৯৯৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তার অভিষেক ঘটে। সেই বছর তিনি নির্মাণ করেন প্রথম সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’, যা আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। পরবর্তীতে তিনি নির্মাণ করেন ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘আমার আছে জল’ এবং তার শেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। এই চলচ্চিত্রগুলোও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়, যা তার সৃজনশীলতার অমোঘ প্রমাণ।
সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে তার অসামান্য দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
ব্যক্তিগত জীবনে, হুমায়ূন আহমেদ দুবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদের সঙ্গে তার দাম্পত্য জীবন ছিল ১৯৭৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত, এবং এই সংসারে চার সন্তান হয়: অভিনেত্রী শীলা আহমেদ, নোভা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ এবং নুহাশ হুমায়ূন। ২০০৫ সালে তিনি অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন, এবং তাদের দুই পুত্রসন্তান হলেন নিশাত হুমায়ূন এবং নিনিত হুমায়ূন।
আজকের দিনে, হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে তার কৃতিত্বগুলো স্মরণ করা হচ্ছে। তার লেখনির গভীরতা, চলচ্চিত্রের উজ্জ্বলতা এবং নাটকের সৃষ্টিশীলতার প্রতি তার অবিচল অনুরাগ আজও আমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।