আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ ভোক্তা ও বাণিজ্যিক চাপ কমাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ২শতাধিক খাদ্যপণ্যের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত এই আদেশ ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে। শুল্ক প্রত্যাহারের মধ্যে রয়েছে কফি, গরুর মাংস, কলা, কমলার রসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য।
এ প্রসঙ্গে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জানান, “কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। বর্ধিত দাম কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মূল্যস্ফীতি নেই।” তিনি বলেন, শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে বাজারে স্বাভাবিক মূল্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে এবং সাধারণ ভোক্তারা এর সরাসরি সুবিধা পাবেন।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রেক্ষাপট হলো তার প্রশাসনের পূর্ববর্তী শুল্কনীতি। ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের ওপর বর্ধিত রপ্তানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। তখন ট্রাম্প এই শুল্ক আরোপকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা’ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তবে শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন বাজারে বিভিন্ন দেশের পণ্যের সরবরাহ কমে যায় এবং খাদ্য ও কৃষিজ পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও কৃষি বাজারে সরবরাহ আসে প্রধানত এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের ফলে এই পণ্যের আমদানি ব্যাহত হয় এবং বাজারে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দেশটির কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্সে (CPI) পরিসংখ্যানের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ, স্টেকের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ, কলার দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ, টমেটোর দাম বেড়েছে ১ শতাংশ এবং মোট খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২.৭ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের জাতীয় সংস্থা ফুড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই পদক্ষেপের ফলে সাধারণ ভোক্তা, আমদানিকারক, উদ্যোক্তা এবং খাদ্য সরবরাহ চেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই উপকৃত হবেন।”
একই সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেন, “আমার মনে হয় না আর কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে। আমরা শুধু বাজারকে সাময়িকভাবে স্থিতিশীল করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। কফির দাম সাময়িকভাবে বেড়ে গিয়েছিল, শিগগিরই তা স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে।”
শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দাম স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ দেশটির ভোক্তা ও আমদানিকারকদের ওপর প্রভাবশালী প্রভাব ফেলবে এবং মার্কিন অর্থনীতিতে বাণিজ্যিক সহযোগিতার সুযোগ পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে।