নিজস্ব প্রতিবেদক
মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা গত রোববার (১৬ নভেম্বর) দায়িত্ব হস্তান্তর করে বিদায় নিয়েছেন। তার নতুন কর্মস্থল চট্টগ্রাম, যেখানে তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করবেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিদায়ী অনুষ্ঠানটি এক আবেগঘন মুহূর্তে পরিণত হয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাহিত্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ জেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন এবং ফুলে ফুলে ভরে ওঠে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি জেলা প্রশাসন থেকে আয়োজিত হয়, যেখানে জেলা প্রশাসককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
তবে, তার বিদায়ের মুহূর্তে জেলা প্রশাসক মিঞা তার মানবিকতার আরেকটি উদাহরণ রেখেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী কবি ইমরান আহমেদকে তিনি নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে অত্যাধুনিক একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার উপহার দেন। ইমরান আহমেদ, যিনি জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী, তার দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অন্যের সাহায্য প্রয়োজন ছিল। তার পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার কেনা সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসক তার বিদায় অনুষ্ঠানে কবিকে এ উপহার দিয়ে তার মানবিকতায় নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
ইমরান আহমেদ হুইলচেয়ার পেয়ে আনন্দিত হয়ে বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য”—এই বাণীটি আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “ডিসি স্যার একজন অভিভাবক ও মানবিক নেতার দায়িত্ববোধ নিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ সেই আশ্বাস বাস্তবে রূপ নিলো।”
এছাড়া, বিদায় অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের মানবিক কাজের প্রশংসা করেন উপস্থিত অতিথিরা। জেলা প্রশাসক মিঞা, তার সময়কালে, শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনই করেননি, বরং অসহায়, প্রতিবন্ধী, শিশু, ও অন্যান্য নানান শ্রেণির মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সোহাগকে স্মার্টফোন প্রদান, ২০ প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার ও ইলেকট্রিক চেয়ার উপহার, অসহায় মানুষদের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা, শীতকালীন সময়ে দরিদ্রদের কম্বল বিতরণ, এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য তার নিজস্ব উদ্যোগ।
নারায়ণগঞ্জে তার কর্মকালীন সময়ে “গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ” কর্মসূচি, মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন, ও জনগণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ তাকে মানবিক ডিসি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জ শহরের উন্নয়নেও তার ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।
জাহিদুল ইসলাম মিঞা ২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএসের মাধ্যমে প্রশাসনে যোগ দেন। তার কর্মজীবনে তিনি লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় এনডিসি, এসিল্যান্ড ও ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কমলগঞ্জে ইউএনও থাকাকালে তাকে জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
তার বিদায়ের খবর ছড়িয়ে পড়তেই নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ বলেছেন, বিদায়ী ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে তারা দীর্ঘদিন মনে রাখবেন তার মানবিকতা, বিনয় ও জনবান্ধব আচরণের জন্য।