বিনোদন ডেস্ক
টলিউডের পরিচিত মুখ পায়েল সরকার সম্প্রতি কাস্টিং কাউচের এক কঠিন অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন। এক পডকাস্টে অংশ নিয়ে তিনি জানান, ক্যারিয়ারের একটি সংকটময় সময়ে ইন্ডাস্ট্রির এক প্রযোজক তার কাছে সরাসরি যৌন সুবিধা দাবি করেছিলেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন নিজের ভেতর চেপে রাখলেও এবার প্রথমবারের মতো তিনি তা প্রকাশ্যে তুলে ধরলেন।
পায়েল সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, জনপ্রিয়তা ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা থাকা সত্ত্বেও তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, চলচ্চিত্র শিল্পে নারী অভিনয়শিল্পীদের জন্য কর্মক্ষেত্র সব সময় সমান নিরাপদ থাকে না। পডকাস্টের প্রচারণামূলক ভিডিওতে দেখা যায়, সঞ্চালিকার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রির এক প্রযোজক তার কাছে নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা দাবি করেছিলেন। সঞ্চালিকা বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানতে চাইলে পায়েল নিশ্চিত করেন যে প্রযোজকটি যৌন সুবিধাই দাবি করেছিলেন। তার বক্তব্য শিল্পে প্রচলিত কাস্টিং কাউচ সংস্কৃতির প্রসঙ্গকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
টলিউডে একসময় বাণিজ্যিক সিনেমার সফল জুটি হিসেবে পায়েল ও দেবের নাম উল্লেখযোগ্য ছিল। তাদের অভিনীত একাধিক ছবি বক্স অফিসে সাফল্য পেয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত জীবনের চ্যালেঞ্জিং সময় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পায়েল জানান, ক্যারিয়ারের একটি পর্যায়ে যখন তার কয়েকটি ছবি সফল হয়নি, তখন ওই প্রযোজক তার প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। তিনি জানান, চলচ্চিত্রে ব্যর্থতার পর ওই ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সম্পর্কে নানা অবমাননাকর লেখা প্রকাশ করতেন এবং ছবি সম্পাদনা করে অপমানজনক মন্তব্য করতেন। পায়েলের মতে, প্রযোজকের আচরণ ছিল চরম মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী।
পডকাস্টে এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সময় অভিনেত্রী বলেন, তার প্রতি নেতিবাচক আচরণ কেবল ব্যক্তিগত অসম্মানেই সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং কর্মক্ষেত্রে তার অবস্থান ও আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলেছিল। তিনি উল্লেখ করেন, শিল্পে নতুন বা প্রতিষ্ঠিত—উভয় ধরনের শিল্পীই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন। এ ধরনের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে নারী অভিনয়শিল্পীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ।
পায়েল আরও বলেন, ক্যারিয়ারে কঠিন সময় পার করার পর তিনি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ান। পরবর্তী সময়ে ‘প্রেম আমার’ ও ‘লে ছক্কা’–র মতো জনপ্রিয় ছবি তার কর্মজীবনকে নতুন গতিপথ দেয়। তিনি স্মরণ করেন যে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে দুটি বড় প্রকল্পের শুটিং করেছিলেন, যা তাকে আবারও মূলধারার আলোচনায় ফিরিয়ে আনে। এই পরিবর্তন তার পেশাগত সক্ষমতা ও ধারাবাহিকতার প্রমাণ হিসেবেই বিবেচিত হয়।
টলিউডসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন চলচ্চিত্র শিল্পে কাস্টিং কাউচ নিয়ে বহু সময় আলোচনা হয়েছে। অনেক শিল্পী সময়ে সময়ে এই ইস্যুতে মুখ খুললেও প্রকাশ্যে অভিজ্ঞতা জানানো এখনও অনেকের জন্য কঠিন। পায়েল সরকারের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা প্রকাশ পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয় যে কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ শিল্পে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং নতুন শিল্পীদের জন্য একটি বার্তা দেয় যে অনৈতিক প্রস্তাব বা চাপের মুখে নীরব থাকা বাধ্যতামূলক নয়। একই সঙ্গে প্রযোজক, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের আচরণবিধি ও পেশাগত নৈতিকতা নিশ্চিত করা শিল্পের সুস্থ পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পায়েল সরকারের বক্তব্য চলচ্চিত্র শিল্পে প্রচলিত নীরবতা ভাঙার একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে শুধু ব্যক্তিগত ঘটনা তুলে ধরেননি; বরং বৃহত্তর শিল্পে নারীদের নিরাপদ কাজের পরিবেশ প্রতিষ্ঠার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। এই ধরনের প্রকাশ ভবিষ্যতে একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া শিল্পীদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা পালন করতে পারে এবং প্রতিষ্ঠিত করতে পারে যে শিল্পে পেশাদারিত্বের নামে কোনো অনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।