আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায়কে “অত্যন্ত উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এই রায় তাকে বিশেষভাবে আতঙ্কিত করেছে এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিচারব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করা না গেলেও, এটি ইতিবাচক কোনো ঘটনা নয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ঢাকার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সোমবার অনুপস্থিত অবস্থায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।
শশী থারুর সাংবাদিকদের জানান, “আমি দেশের ভেতরে হোক বা বাইরে— মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নই। তাই এ রায় আমাকে বিশেষভাবে আতঙ্কিত করেছে।” তিনি আরও বলেন, অন্য দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়, তবে এটি যে ইতিবাচক কোনো ঘটনা নয়, তা বলতে বাধ্য।
প্রসঙ্গত, ২৪ জুলাই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। একই মামলায় দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনাল একইসঙ্গে দেশেই থাকা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়। এই সম্পদ জুলাইয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই রায় ভারতের জন্য কূটনৈতিকভাবে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ শিখাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ফেরত চেয়ে ইতিমধ্যেই দুইবার প্রত্যর্পণ অনুরোধ করেছে, তবে ভারত সাড়া দেয়নি। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অপরাধীদের প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর পক্ষে একমত।
শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার সময় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় ছিল। বর্তমানে ভারতের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে এসেছে—একদিকে যদি তারা তাকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করে, তাহলে বাংলাদেশ এটিকে কূটনৈতিক অবজ্ঞা হিসেবে গণ্য করবে; অন্যদিকে, ফেরত দিলে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জটিল ও সঙ্কটপূর্ণ করে তুলেছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলার রায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থাপিত প্রত্যর্পণ ও কূটনৈতিক চুক্তি, পাশাপাশি দুই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা, ভবিষ্যতে এই রায়ের প্রভাবকে আরও জটিলভাবে প্রতিফলিত করবে।