নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে স্পর্শকাতর এলাকায় দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বডি ক্যামেরা প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা কেনার পরিকল্পনা থাকলেও তা পর্যালোচনার পর কমিয়ে আনা হবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
ড. সালাহউদ্দিন জানান, বডি ক্যামেরার ব্যবহার এবং ক্রয়ের বিষয়ে ব্যাপক পর্যালোচনা সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, “বডি ক্যামেরা প্রথমে অনেকগুলো হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, তবে আমরা পর্যালোচনা শেষে রেশনালাইজড সংখ্যা নির্ধারণ করতে যাচ্ছি। এর প্রধান লক্ষ্য হল স্পর্শকাতর এলাকায় কার্যক্রম মনিটর করা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ক্রয় সম্পন্ন করা।”
উপদেষ্টা আরও জানান, বডি ক্যামেরা শুধুমাত্র সব এলাকায় নয়, বরং নির্বাচন সম্পর্কিত সংবেদনশীল এলাকায় ব্যবহৃত হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী, সেন্সিটিভ এলাকার চিত্র সংগ্রহের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবে। তিনি বলেন, “সব জায়গায় বডি ক্যামেরা ব্যবহার করা সম্ভব নয়, কারণ এগুলো মনিটর করার ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী কার্যক্রমে প্রাপ্ত চিত্রের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
৪০ হাজার বডি ক্যামেরার প্রাথমিক পরিকল্পনা পর্যালোচনা শেষে কতটুকু কমানো হবে তা নির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি। ড. সালাহউদ্দিন বলেন, “সংখ্যা রেশনালাইজ করা হচ্ছে, তবে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা এলে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যাবে।” ক্রয় প্রক্রিয়ার সময়সীমা সম্পর্কেও তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্ভবত পরবর্তী সপ্তাহে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন এবং তখনই ক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে।
বডি ক্যামেরা ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো নির্বাচনী এলাকায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমের উপর নজরদারি বৃদ্ধি করা। বিশেষভাবে স্পর্শকাতর এলাকায় প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি এবং জনসমাগমের প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে, নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, অপরাধ এবং সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে রাখা, এবং সুষ্ঠু ভোটপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সহজ হবে।
উল্লেখ্য, আগে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা ক্রয়ের পরিকল্পনা ছিলো, যা দেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা সংস্থার বিভিন্ন ইউনিটে বিতরণ করা হতো। কিন্তু ক্রয় ও ব্যবহার সংক্রান্ত বাস্তবায়নযোগ্যতা, বাজেট এবং মনিটরিং সুবিধা বিবেচনায় বর্তমানে শুধুমাত্র স্পর্শকাতর এলাকায় সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির একটি অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, বডি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহার করা হবে। এতে ভোটের দিন বা নির্বাচনী কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে সম্ভাব্য সংঘাত বা আইনভঙ্গের দ্রুত সনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই আধুনিকায়ন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
সম্প্রতি ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী স্পর্শকাতর এলাকা ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। বডি ক্যামেরার ব্যবহার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব ও কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বাড়িয়ে দেবে এবং নির্বাচনী পরিবেশকে আরও নিরাপদ করবে।