জেলা প্রতিনিধি
বান্দরবান
বান্দরবানের লামা উপজেলায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনার সময় বাধা প্রদানের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও এবি পার্টির নেতাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলায় আরও ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) লামা থানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ নুর উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এবি পার্টির কেন্দ্রীয় পর্যটন বিষয়ক সম্পাদক এবি ওয়াহিদ এবং এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী এরফানুল হককে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মিজবাহ উদ্দিন মিন্টু (৪৮), মো. মহিউদ্দিন (৪০), শওকত ওসমান (৪০), মুজিবুল হক চৌধুরী (৫০), খাইয়ের উদ্দিন মাস্টার (৫০), মিজান, জলিল, আলম মেম্বার ও জহিরসহ আরও কিছু স্থানীয়কে মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশ ব্যক্তি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং তারা ইটভাটার মালিক।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশনায় রোববার লামা উপজেলার পাগলিছড়া ও ফাইতং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে। অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজুয়ান উল ইসলাম। অভিযোগে বলা হয়েছে, এবি পার্টির নেতা এবি ওয়াহিদ ও এনসিপি নেতা এরফানুল হক তাদের অনুসারীদের নিয়ে অভিযান চলাকালীন ইটভাটা মালিকদের বিভিন্নভাবে বাধা দেন, যার ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অভিযান বন্ধ রেখে ফিরে যেতে হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযানের শুরুতে অবৈধ তিনটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী অভিযানে আরও কয়েকটি ইটভাটায় যাওয়ার সময় মালিকরা তাদের শ্রমিকদের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। তিনি জানান, এই ধরনের ঘটনা পরিবেশ রক্ষায় সরকারের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলছে।
মামলায় উল্লেখিত ৪০০ অজ্ঞাত আসামির মধ্যে স্থানীয় শ্রমিক ও ইটভাটার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী তদন্তের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয় প্রশাসনও অভিযানের সময় নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সহায়তা প্রদান করেছে।
এ ঘটনায় এনসিপি বান্দরবান জেলা সমন্বয়ক শহীদুল ইসলাম সোহেল জানান, অভিযুক্তরা ব্যক্তিগত স্বার্থে দলের নাম ব্যবহার করলে সেটি তাদের নিজস্ব বিষয়। সরকারি কর্মকাণ্ডে বাধা প্রদানের দায় এনসিপি বান্দরবান জেলা গ্রহণ করবে না।
বান্দরবান জেলার স্থানীয় প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের অভিযান অবৈধ ইটভাটাগুলোর পরিবেশগত প্রভাব কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় নৈরাজ্য রোধে নিয়মিতভাবে পরিচালিত হবে। তারা আরও বলেন, অভিযানের বাধাগুলি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে স্থানীয় পর্যায়ে নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, অবৈধ ইটভাটার কারণে বান্দরবানের বনাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা এবং জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ধরনের ইটভাটা কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে পরিবেশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনমানের ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। তাই প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বিত উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।