জাতীয় ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ১৫ মাসে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন। মঙ্গলবার তিনি তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক স্ট্যাটাসে এসব তথ্য তুলে ধরেন। শফিকুল আলম বলেন, সরকারের কার্যক্রম বাস্তবে তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যগুলোর প্রায় সবই সম্পন্ন করেছে এবং এটি গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তিনি জানান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়েছে। দেশে শান্তি ফিরেছে এবং পূর্ববর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা বন্ধ হয়েছে। শফিকুল আলম যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সুবিধা সংক্রান্ত সমালোচনার জবাবে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই শুল্ক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।
প্রেসসচিবের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারের আইন প্রণয়ন কার্যক্রমও গত ১৫ মাসে উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, রেকর্ডসংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া জুলাই ঘোষণা ও জুলাই চার্টার এক নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রমের প্রসঙ্গ তুলে শফিকুল আলম বলেন, নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামিন বা মামলার অপব্যবহার সীমিত হয়েছে। এছাড়া লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় দেশের শিল্প ও বন্দর খাতের রূপান্তর ত্বরান্বিত হয়েছে এবং এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো বাংলাদেশের অবস্থানকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও পুনরায় প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণেও সরকার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। শফিকুল আলম জানান, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম রোধ করা হয়েছে, টাকা স্থিতিশীল রাখা হয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে নেমে ৭ শতাংশে এসেছে।
সামাজিক ও বিচারিক ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে অতীতের নিপীড়নের জন্য জবাবদিহি, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বোধের প্রতিষ্ঠা, গুম প্রতিরোধ, এবং চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতির নিরুৎসাহ। তিনি জানান, র্যাব এখন আইনের আওতায় পরিচালিত হয় এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে। গত ১৬ মাসে কোনো সাজানো ‘ক্রসফায়ার’ ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
মাধ্যমিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। শফিকুল আলম বলেন, পূর্ববর্তী নির্যাতনের ওপর নির্মিত জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্রগুলো এই প্রক্রিয়ার প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ইতিহাসের এক সক্রিয় পর্যবেক্ষক হিসেবে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের আলোকে বলা যায় যে, বাংলাদেশে এত অল্প সময়ে কোনো সরকার এত বিস্তৃত অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি, যতটা অর্জিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাসে। এই অর্জনসমূহের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্ষমতা, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, বিচারিক স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে।