খেলাধুলা ডেস্ক
ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন তরুণ মিডফিল্ডার মোহাম্মদ মোরসালিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই জয়ে গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা যায়।
ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক কৌশলে খেলতে থাকে। প্রথমার্ধে দুই দলই গোলের সুযোগ তৈরি করলেও কোনোটিই সফল হয়নি। বিরতির পর মাঠে ফেরার পর বাংলাদেশ আরও গোছানো খেলা উপহার দেয়। খেলার ৬৪তম মিনিটে ডান দিক থেকে আক্রমণ গঠন করে বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা। সেই আক্রমণের ধারাবাহিকতায় বক্সের সামনে বল পেয়ে মোরসালিন দক্ষতার সঙ্গে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। তার এই গোলেই শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত হয় ম্যাচের ফল।
ম্যাচজুড়ে বাংলাদেশ দলের রক্ষণভাগ দৃঢ় ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে শেষ মুহূর্তে ভারতের একাধিক আক্রমণ প্রতিহত করে তারা গোল রক্ষা করতে সক্ষম হয়। মিডফিল্ডেও বাংলাদেশ কার্যকর সমন্বয় দেখায়, ফলে ভারতীয় দল স্বাচ্ছন্দ্যে আক্রমণ সাজাতে পারেনি। তরুণ খেলোয়াড়দের গতি, পাস বিনিময় ও বল দখলের দক্ষতা বাংলাদেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
দর্শকদের উপস্থিতি এবং সমর্থনও ম্যাচকে উৎসবমুখর করে তোলে। টিকিট অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাওয়ায় খেলাটি নিয়ে সাধারণ দর্শকদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তবে স্টেডিয়ামের কিছু সেক্টরে খেলা শুরুর পরও আসন ফাঁকা দেখা যাওয়ায় টিকিট ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। তারা অভিযোগ করেন, টিকিট উত্তোলন ও বিক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং কিছু স্থানে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট বিক্রির ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের ধারণা। দর্শকদের মতে, এ ধরনের অনিয়ম থাকলে সাধারণ দর্শক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সামগ্রিক আয়োজনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ম্যাচ শেষে কোচিং কৌশল নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দলের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি থাকলেও তারা মনে করেন, উচ্চমানের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ধারাবাহিক সফলতা পেতে কোচিং পদ্ধতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও সুসংহত হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় দলের প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত থাকলেও তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কৌশল নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে তারা দলের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে স্থিতিশীল প্রশিক্ষণ কাঠামো, খেলোয়াড় উন্নয়ন এবং পারফরম্যান্স বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশের এই জয়কে দেশের ফুটবলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুই দশকেরও বেশি সময় পর ভারতের বিপক্ষে জয় দলকে নতুন আত্মবিশ্বাস দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ধারাবাহিক ফল করতে না পারলেও তরুণ খেলোয়াড়দের উত্থান এবং মাঠে তাদের প্রতিশ্রুতিশীল পারফরম্যান্স নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ম্যাচটির ফলে ফিফা আন্তর্জাতিক সূচিকে বাংলাদেশ-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জয় ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতামূলক আসরগুলোতে বাংলাদেশের মানসিক দৃঢ়তা বাড়াবে এবং দলীয় সমন্বয় ও কৌশলগত প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি তরুণ খেলোয়াড়দের উন্নয়ন, অনুশীলন কাঠামো শক্তিশালী করা এবং আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচ আয়োজন—এসব ক্ষেত্রেও দেশের ফুটবল অগ্রগতির সুযোগ রয়েছে।
দীর্ঘদিন পর ভারতের বিপক্ষে অর্জিত এই জয় তাই শুধু এক ম্যাচের সাফল্য নয়; বরং দেশের ফুটবলের পুনরুত্থানের সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে এসেছে। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে এই সাফল্যকে ধরে রাখা, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স প্রদর্শন করা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও প্রতিযোগিতামূলক দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।