আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে তার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে। দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ঘোষণা করেছেন, বর্তমানে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এই বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতের বিনিয়োগ ও চুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।
এমবিএস এই ঘোষণা দেন হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাংবাদিকদের সাক্ষাতকালে। তিনি জানান, প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অন্যান্য খাতে দুই দেশের মধ্যে বহু চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যা বড় ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে। তিনি আরও বলেন, “আজ যে চুক্তিগুলো আমরা করছি, সেগুলোই এই বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে সহজ করবে।”
এই ঘোষণার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং বলেন, “৬০০ বিলিয়ন ডলার এখন ১ ট্রিলিয়ন হবে?” এমবিএস জবাবে নিশ্চিত করেন যে, এই বৃদ্ধি নিশ্চিতভাবেই সম্ভব। ট্রাম্প উল্লেখ করেন, “আমরা ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ নিশ্চিতভাবে ধরতে পারি, তবে এই অঙ্ক আরও কিছুটা বাড়তেও পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্সেস রিমা বিনত বান্দার আল সউদ বৈঠকটিকে দুই দেশের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, বৈঠকে কয়েকটি বড় দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যদিও চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেননি।
রাষ্ট্রদূতের মতে, এই চুক্তিগুলো দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে, এবং সৌদি ও মার্কিন নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, চুক্তিগুলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের যৌথ প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের এই বিনিয়োগ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত প্রযুক্তি ও এআই খাতে বৃহৎ বিনিয়োগ, দুই দেশের মধ্যে উদ্ভাবন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে নতুন সুযোগ তৈরি করবে। এছাড়া, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সৌদি আরবের আর্থিক অংশগ্রহণ এবং মার্কিন বাজারে তার অবদানও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের এই প্রচেষ্টা দুই দেশের রাজনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও প্রভাবিত করতে পারে। দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ চুক্তি ও সহযোগিতা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি খাতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ কাজ করতে পারে।
এমবিএসের ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে সৌদি বিনিয়োগের পরিধি ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক দিকেই নয়, বরং প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে দুই দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে।
সৌদি আরবের এই পরিকল্পিত বিনিয়োগ সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। বিনিয়োগের মাধ্যমে সৌদি আরব এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব হবে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।