খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশের ক্রিকেটে ঐতিহাসিক এক অধ্যায় যোগ হলো আজ বুধবার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মাঠে নেমে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলছেন মুশফিকুর রহিম। মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বাগতিক দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় ম্যাচটি শুরু হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ দুই দশকের পথচলায় মুশফিকুর রহিম দেশের হয়ে লাল বলের ক্রিকেটে নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ২০০৫ সালে অভিষেকের পর ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, দলকে বহু জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বড় ইনিংস গড়ার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ফলে তার শততম টেস্টকে কেন্দ্র করে দল, বিসিবি ও সমর্থকদের মাঝে ছিল বিশেষ আগ্রহ। ব্যাটার হিসেবে বাংলাদেশে সর্বাধিক রান করার কৃতিত্বও তার ঝুলিতে, যা এই মাইলফলক ম্যাচকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দাপুটে জয়ে এগিয়ে থাকে। সিলেটে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই শক্ত অবস্থান দেখিয়ে আয়োজকরা ১–০ ব্যবধানে সিরিজে লিড নেয়। ফলে মিরপুর টেস্ট বাংলাদেশের জন্য শুধু সিরিজ জয়ের সুযোগই নয়, বরং আইরিশদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার লক্ষ্য পূরণের সুযোগও এনে দিয়েছে। দলের লক্ষ্য অর্জনে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি নতুনদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করছে।
মিরপুরে আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে এসেছে দুটি পরিবর্তন। প্রথম টেস্টের একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন পেসার হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা। তাদের পরিবর্তে দলে ফিরেছেন এবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। দীর্ঘ সময় চোট থেকে সেরে ওঠা এবাদত প্রায় সাড়ে চার মাস পর দলে সুযোগ পেলেন, আর খালেদের ফিরে আসা ঘটল প্রায় সাত মাস পর। টিম ম্যানেজমেন্ট বলছে, মিরপুরের কন্ডিশন বিবেচনায় পেস বোলিং বিভাগে অভিজ্ঞতার উপস্থিতি ম্যাচের শুরুতেই সুবিধা এনে দিতে পারে।
অন্যদিকে, ব্যাটিং লাইনআপে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয় ওপেনিং জুটিতে শুরু করবেন। তিন ও চার নম্বরে সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হক আছেন, যারা মিরপুরের পরিচিত উইকেটে বড় ইনিংস গড়ার অভিজ্ঞতা রাখেন। মুশফিকের শততম টেস্টে তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স দলকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লিটন দাস এবং মেহেদী হাসান মিরাজ মধ্য ও নিচের সারিতে ব্যাটিং শক্তি বাড়াবে।
বোলিং বিভাগে তাইজুল ইসলামকে স্পিন আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন মুখ হাসান মুরাদকে দলে রাখা হয়েছে, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করে নজর কেড়েছেন। পেস বিভাগে এবাদত ও খালেদের সঙ্গে তৃতীয় পেস অপশন হিসেবে মিরাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
আয়ারল্যান্ডও নিজেদের একাদশে অভিজ্ঞতা ও তরুণদের মিশেলে দল সাজিয়েছে। অ্যান্ড্রু বালবার্নির নেতৃত্বে দলে আছেন পল স্টার্লিং, হ্যারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার ও লরকান টাকারের মতো ক্রিকেটাররা, যারা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করেন। মিরপুরের উইকেটে স্পিনই যে বড় ভূমিকা রাখবে, তা মাথায় রেখে তারা ম্যাথু হামপ্রিস ও গ্যাভিন হোয়েকে দলে রেখেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের লক্ষ্য হবে প্রথম টেস্টের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলা এবং সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা।
মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়াম দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের কেন্দ্রবিন্দু। এখানকার উইকেট সাধারণত স্পিন-সহায়ক হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটসম্যানরাও বড় রান করতে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে দলগুলো ব্যাটিং-বোলিংয়ের ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় নিয়ে একাদশ সাজানোর চেষ্টা করেছে। আবহাওয়া পরিষ্কার থাকায় ম্যাচ পুরো পাঁচ দিনই মাঠে গড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
ম্যাচটিকে ঘিরে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। বিশেষত মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে সমর্থকদের উপস্থিতি বাড়তে দেখা গেছে। খেলোয়াড়দের মধ্যেও তার এই ঐতিহাসিক মাইলফলক উপলক্ষে বাড়তি অনুপ্রেরণা কাজ করছে।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মাহমুদুল হাসান জয়, সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, ইবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ ও হাসান মুরাদ।
আয়ারল্যান্ড একাদশ: অ্যান্ড্রু বালবার্নি (অধিনায়ক), পল স্টার্লিং, ক্যাড কারমাইকেল, হ্যারি টেক্টর, কার্টিস ক্যাম্ফার, লরকান টাকার, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, স্টিফেন দোহেনি, জর্ডান নিল, ম্যাথু হামপ্রিস ও গ্যাভিন হোয়ে।