খেলাধুলা ডেস্ক
বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম আজ তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ১০০তম টেস্ট খেলার মাইলফলকে পৌঁছেছেন। ২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে তিনি দেশের জন্য অবিচলভাবে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে অবদান রাখছেন। ঢাকা শেরে-ই বাংলা স্টেডিয়ামে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি তার জন্য বিশেষ মর্যাদা বহন করছে।
মুশফিকুর রহিমের এই অর্জন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য নতুন ইতিহাস রচনা করছে। তিনি ৮৪তম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শততম টেস্ট খেলছেন এবং এশিয়ার মধ্যে ২৭তম। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড় আগে এই মাইলফলকে পৌঁছাননি। মুশফিকের আগে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ৪০ জন খেলোয়াড় বিভিন্ন সময়ে দলে অভিষেক ঘটিয়েছেন। হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও মোহাম্মদ রফিকের মতো সাবেক খেলোয়াড়দের সাথে তার প্রারম্ভিক অভিষেকের সংযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহরা দলে যোগ দিয়েছেন, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছেন শুধুমাত্র মুশফিক।
২০০৫ সালের ২৬ মে লর্ডস টেস্টে ১৮ বছর বয়সে অভিষেক হওয়া মুশফিকের জন্য সেই ম্যাচ ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক পরীক্ষা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টপ অর্ডারে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করার পর থেকে তিনি বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। প্রথম ৫০ টেস্টে তার গড় ছিল ৩২-এর নিচে, কিন্তু পরবর্তী ৪৯ টেস্টে উন্নতি করে ৪৫-এর কাছাকাছি পৌঁছেছেন। ২০১৭ সাল থেকে মাত্র চার ব্যাটার তার চেয়ে বেশি গড়ে রান করেছেন।
মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে, যার মধ্যে দুটি উইকেটকিপার হিসেবে, যা বিশ্বরেকর্ড। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবার ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো দলগুলোকে হারানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৩৪ ম্যাচে দলের নেতৃত্বে থেকে ২০১৩ সালে গলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার সর্বোচ্চ চারটি সেঞ্চুরি রয়েছে।
মুশফিকের পরবর্তী দুটি ডাবল সেঞ্চুরি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ২০১৮ সালে করা অপরাজিত ২১৯ রানের ইনিংস এখনও দেশের ব্যাটিং ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ৯৯ টেস্টে ৪৮.৪০ গড়ে ১২ সেঞ্চুরি ও ২৭ হাফ সেঞ্চুরিতে ৬৩৫১ রান সংগ্রহ করেছেন, যা তাকে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রথম ছয় সেরা ইনিংসের তালিকায় তার চারটি ইনিংস স্থান পেয়েছে।
মুশফিকুর রহিমের দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারের পেছনে রয়েছে অধ্যবসায়, শৃঙ্খলিত জীবন ও খেলার প্রতি গভীর নিবেদন। তার অনুশীলন এবং মাঠে নিয়মিত প্রস্তুতির ধারা নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ড্রেসিংরুমে পরিপাটি থাকা, ব্যাট ও জুতো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা, নিজস্ব অনুশীলন রুটিন বজায় রাখা—সবই তার পেশাদারিত্বের পরিচায়ক। সিনিয়র ও জুনিয়র ক্রিকেটারদের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সম্মান অর্জন করেছেন।
আজকের ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্টটি শুধু তার ব্যক্তিগত মাইলফলক নয়, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই ম্যাচে তার পারফরম্যান্স ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে উদ্দীপনা এবং প্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে। দেশের ক্রিকেট ভক্তরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন এবং আশা করছেন, মাইলফলকটি তার ক্যারিয়ারের আরেকটি স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে সংরক্ষিত হবে।