জাতীয় ডেস্ক
জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডাদেশকে কেন্দ্র করে দেশে কোনো ধরনের অস্থিরতা বা নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ মন্তব্য করেন।
সভা-পরবর্তী ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আদালতের রায় ঘোষণার পর দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে এবং কোথাও কোনো ধরনের সহিংসতা বা নাশকতার খবর মন্ত্রণালয়ের কাছে আসেনি। তিনি বলেন, রায় ঘোষণার পর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, জনজীবন স্বাভাবিক রয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী দেশের পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাঁর ভাষ্যমতে, “রায় হওয়ার পরে কোনো রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। বিজয় দিবসেও কোনো অস্থিরতার শঙ্কা নেই।”
তিনি জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে ঘোষিত কর্মসূচিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ও মন্ত্রণালয় পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা অনুযায়ী অনুষ্ঠানসমূহ বাস্তবায়ন করবে। উপদেষ্টা বলেন, “আগে যেভাবে সব কর্মসূচি হয়েছে, এবারও সেভাবে হবে। গতবার আমাদের প্যারেড হয়নি, এবারও প্যারেড হবে না। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্যান্য বছরের মতোই সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে।”
দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন, আদালতের রায় এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি ঘিরে জনমনে উদ্বেগের সম্ভাবনা থাকলেও, উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তিনি জানান, বিভিন্ন সংস্থা ও গোয়েন্দা বিভাগ মাঠপর্যায়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে, যেন কোনো গুজব বা অপপ্রচার পরিস্থিতি অস্থির করে তুলতে না পারে।
এদিকে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া একজন সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তিনি ঘটনাটি আগে শোনেননি এবং বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে। তিনি জানান, “এই জিনিসটা আমি প্রথম শুনলাম। অনুসন্ধান করার পর হয়তো আমি জানতে পারব।” সাংবাদিক নির্যাতন বা হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে আটক বা ধরে নিয়ে যাওয়া আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য কি না—এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। তিনি উল্লেখ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সবসময় আইনের সীমার মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া থাকে। এসব বাহিনীর দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম ঘটলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, তদন্ত ছাড়া কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না; তবে এ ধরনের ঘটনা প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারি পর্যায়ে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশি উপস্থিতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা অন্যতম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব পদক্ষেপ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি সংবেদনশীল হলেও উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে সরকার পরিস্থিতি শান্ত ও স্থিতিশীল রাখতে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের জনগণ আইন ও আদালতের প্রতি আস্থা রেখে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবে।
সামগ্রিকভাবে সরকারের অবস্থান হচ্ছে—আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং জাতীয় দিবসসহ সব কর্মসূচি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার মতো পরিবেশ বিদ্যমান। উপদেষ্টা জানান, মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বাহিনীসমূহ সমন্বিতভাবে দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।