জাতীয় ডেস্ক
নোয়াখালীতে আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সেনবাগ শাখায় ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের প্রথম মেয়াদ এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয় মেয়াদে কর্মরত থাকা অবস্থায় আলমগীর হোসেন ৮৯টি ভুয়া ঋণ প্রদানের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদক অভিযোগ করেছে। মামলাটি সোমবার (১৭ নভেম্বর) নোয়াখালী স্পেশাল সিনিয়র জজ আদালতে দায়ের করা হয়।
আদালতে দায়ের করা মামলার তথ্য অনুযায়ী, আলমগীর চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদন্ডী এলাকার নুর উল্যাহর ছেলে। তিনি ওই ব্যাংকের বিভিন্ন ঋণ বিতরণ এবং রেকর্ড দেখানোর মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণিত হয়েছেন। এর আগেও জেলা শহরের দত্তেরহাট শাখায় প্রায় ৭ কোটি টাকার জালিয়াতি ও আত্মসাতের ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, আলমগীর প্রথমে ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত নোয়াখালী শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও সাবেক ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময় তিনজন ভুয়া ঋণ গ্রহীতার মাধ্যমে ২১ লাখ ৪০ হাজার টাকাসহ মোট প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের অভিযানে ব্যাংক শাখায় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও যাচাই করা হয়। অভিযানের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক উপস্থিত ছিলেন না, তবে সংরক্ষিত নথিতে অসংখ্য অনিয়ম ধরা পড়ে। ব্যাংকের বিভিন্ন রেকর্ডে ভুয়া দলিল, জাল স্বাক্ষর এবং জালিয়াতির স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
উপসহকারী পরিচালক চিন্ময় চক্রবর্তী জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী যেকোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং কোনভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।
এই মামলা দুদকের প্রক্রিয়াধীন অনুসন্ধান ও অর্থনৈতিক অপরাধ দমন ব্যবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপরও পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশিত হয়েছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, ঋণ বিতরণ পদ্ধতি এবং রেকর্ড সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অসংগতি থাকায় ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
মামলার পরবর্তী পর্যায়ে আদালত প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ ও তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলবে। এর মাধ্যমে নোয়াখালী অঞ্চলে ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা এবং আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব বেড়েছে।