বিনোদন ডেস্ক
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা সম্প্রতি বর্তমান সময়ের সংগীত নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য করেছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দেওয়া এই শিল্পী জানান, আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে অটো টিউনের ব্যবহারে শিল্পীদের মৌলিকতা ও পরিশ্রম প্রভাবিত হচ্ছে।
রুনা লায়লা বলেন, অটো টিউন প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন যে কেউ সহজেই গান গাইতে পারেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “অটো টিউনে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। আমার যদি নিজের সুর ঠিক না থাকে, তবে এ ধরনের প্রযুক্তি তা নিজে ঠিক করে দেয়। ফলে গান গাওয়ার প্রক্রিয়ায় শিল্পীর স্বতন্ত্র দক্ষতা ও পরিশ্রমের স্থান কমে আসে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার গানের আসল আবেগ এবং স্বতঃস্ফূর্ততা কমিয়ে দিচ্ছে। রুনা লায়লা বলেন, “আগে আমরা ফুল মিউজিশিয়ান নিয়ে গান করতাম। বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত চলে যেত গান রেকর্ডিং। মিউজিশিয়ানদের প্রতিটি ভুল ধরার মাধ্যমে গান সম্পূর্ণতরূপে তৈরি হতো। এখন সেই প্রচেষ্টা অনেকাংশে হারিয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে স্টুডিওতে কাজ করার পদ্ধতিও পরিবর্তিত হয়েছে। গান রেকর্ডিং প্রক্রিয়ায় আগে যেমন শিল্পী এবং মিউজিশিয়ানরা একসাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতেন, এখন তা স্বল্প সময়ে এবং প্রযুক্তির নির্ভরশীলভাবে সম্পন্ন হয়। রুনা লায়লা বলেন, “আজকাল স্টুডিওতে গিয়ে আমি প্রায়শই শুধু ট্র্যাকের যাচাই করি এবং কাজ শুরু করি। যে পরিশ্রম আমরা আগে করতাম, তা এখন কমেছে।”
শিল্পীর কথায়, গান তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির আধিক্য শুধুমাত্র কৌশলগত সুবিধা দেয় না, বরং তা সৃজনশীল প্রক্রিয়ার মৌলিক স্পন্দনও হ্রাস করে। এই পরিবর্তন গানের মান এবং শিল্পীর পারফরম্যান্সের স্বতন্ত্র পরিচয়কে প্রভাবিত করতে পারে।
রুনা লায়লা মনে করেন, গানের প্রকৃত আবেদন এবং শ্রোতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার জন্য শিল্পীর মৌলিক দক্ষতা ও অনুভূতির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রযুক্তির ব্যবহার অবশ্যই সুবিধাজনক, কিন্তু এটি শিল্পীর মৌলিক দক্ষতা এবং দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার বিকল্প হতে পারে না।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, পূর্বে প্রতিটি রেকর্ডিং সেশন দীর্ঘ সময় ধরে চলত, যেখানে প্রতিটি নোট এবং সুরের নিখুঁততা যাচাই করা হতো। এখন অল্প সময়ে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে গান রেকর্ডিং সম্পন্ন করা হলেও, সেই সময় ও প্রচেষ্টা হারিয়ে যাচ্ছে। রুনা লায়লা এ প্রক্রিয়ার পরিবর্তনকে গানের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং আবেগের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
কিংবদন্তি এই শিল্পীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, বর্তমান সময়ের সংগীত উৎপাদনে প্রযুক্তির অবদান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তা শিল্পীর স্বতন্ত্র সৃজনশীলতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকা প্রয়োজন। শিল্পী ও শ্রোতার মধ্যে সংযোগ এবং গানের প্রকৃত আবেগ রক্ষা করতে সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির সমন্বয় অপরিহার্য।