আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আফগানিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী নুরুদ্দিন আজিজি চলমান আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেই ভারত সফরে আসছেন। আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। পাঁচ দিনব্যাপী এই সফরের মূল লক্ষ্য হলো ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করা।
ভারতের সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আজিজি সফরের সময় ভারতের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ারের (আইআইটিএফ) অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি উভয় দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও মজবুত করার বিষয়গুলো এ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে।
ভারত আফগান পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আফগানিস্তান থেকে ভারত যে পণ্যগুলো আমদানি করেছে, তার মধ্যে রয়েছে—ডুমুর, হিং (মসলা), কিশমিশ, আপেল, রসুন, জাফরান, মৌরি, অ্যালমন্ড বাদাম, অ্যাপ্রিকট, পেঁয়াজ, বেদানা এবং কাঠবাদাম।
দীর্ঘকাল আফগানিস্তানের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল প্রতিবেশী পাকিস্তান। আফগান-পাকিস্তান বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৭০ কোটি ডলারেরও বেশি। পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তান নিয়মিতভাবে কৃষিজ, জ্বালানি, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করত। পাকিস্তানও আফগানিস্তান থেকে ফল, শাকসবজি, মসলা এবং খাদ্যপণ্য আমদানি করত।
কিন্তু গত কয়েক বছরে পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী তেহরিক-ই তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে কেন্দ্র করে কাবুল এবং ইসলামাবাদের মধ্যে তিক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে যে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার টিটিপি নেতা-কর্মীদের আশ্রয়, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ জোগাচ্ছে। কাবুল এই অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছে।
টিটিপি কেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের জেরে গত ৯ থেকে ১৫ অক্টোবর সীমান্তে সংঘাত ঘটে। সংঘাতের পর কাতার ও তুরস্কে শান্তি সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সমঝোতাচুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। সীমান্ত সংঘাতের প্রেক্ষিতে পাকিস্তান আফগানিস্তানের সঙ্গে স্থলবন্দর ও বাণিজ্য রুট বন্ধ রেখেছে, যার ফলে আফগান রপ্তানি খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি পণ্য ও বাণিজ্য রুটের ওপর নির্ভরতা কমাতে আফগান ব্যবসায়ীদের তিন মাস সময় দিয়েছে আফগান সরকারের তালেবান নেতৃত্ব। আফগানিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা আবদুল গনি বারাদার ১২ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয় নিশ্চিত করেছেন।
নুরুদ্দিন আজিজির ভারত সফর এই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। তার সফর আফগানিস্তানের বহির্বাণিজ্য নীতি পুনর্বিন্যাস এবং প্রতিবেশী পাকিস্তানের ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। সফরের মাধ্যমে আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি দুই দেশের অর্থনৈতিক সংযোগ এবং রপ্তানি-আমদানির ক্ষেত্রে নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, আফগান বাণিজ্যমন্ত্রীর এই সফরের এক মাস আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতে সফর করেন। এটি নির্দেশ করে যে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংযোগের ক্ষেত্রে ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহী।