অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের খোলা বাজারে সোনার দাম আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) নতুন সমন্বিত মূল্য নির্ধারণ করেছে, যার ফলে ভালো মানের সোনার ভরি দুই লাখ ৯ হাজার টাকার ওপরে পৌঁছেছে। একদিনের ব্যবধানে এত বড় মূল্যবৃদ্ধি সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার মূল্যবৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাজারে সোনার ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতির কারণে এ সমন্বয় আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। নতুন মূল্য কাঠামো অনুসারে ২২ ক্যারেটের সোনার ভরি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৯ হাজার ৫২০ টাকায়, যা পূর্বের তুলনায় দুই হাজার ৬১২ টাকা বেশি।
গত মঙ্গলবার মাত্র একদিন আগে সোনার দাম ভরিপ্রতি ১ হাজার ৩৬৪ টাকা পর্যন্ত কমানো হয়েছিল। সেই তুলনায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আবারও উল্টো বৃদ্ধির কারণে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে দামের হঠাৎ ওঠানামা স্থানীয় বাজারকে দ্রুত প্রভাবিত করছে, যার ফলে সাধারণ ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ছে।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৩ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি এক লাখ ৭১ হাজার ৪২৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতিতে তৈরিকৃত সোনার প্রতি ভরির নতুন দাম এক লাখ ৪২ হাজার ৫৯২ টাকা। এসব দামের ব্যবধানে বাজারের বিভিন্ন স্তরে ক্রেতাদের আর্থিক পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে বলে অর্থনীতি বিশ্লেষকদের ধারণা।
বিশ্ববাজারে সোনার দামের বৃদ্ধির পেছনে প্রধানত ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাবাজারে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। বহু দেশ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সোনার অনুপাত বাড়াচ্ছে, ফলে চাহিদা ও মূল্য উভয়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নীতি সিদ্ধান্তও সোনার মূল্যকে প্রভাবিত করছে। এসব বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশি বাজার ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হওয়ায় দেশের ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরাও সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে, সোনার দামে বড় ধরনের পরিবর্তন এলেও রুপার বাজারে কোনো পরিবর্তন হয়নি। নতুন ঘোষণায় দেখা যায়, ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম আগের মতোই ৪ হাজার ২৪৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপা ৪ হাজার ৪৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার প্রতি ভরি ২ হাজার ৬০১ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে। রুপার তুলনায় সোনার দামে ধারাবাহিক ওঠানামা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও বেশি মাত্রায় দেখা যাচ্ছে।
দেশের বাজারে সোনার দামের দ্রুত পরিবর্তন সাধারণ ক্রেতাদের পাশাপাশি বিয়ের মৌসুম, উৎসব এবং বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে সোনা ক্রয়কারীদের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকেই সোনাকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেন, ফলে মূল্যবৃদ্ধি তাদের ক্রয়ক্ষমতায় চাপ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় বাজারেও দামের অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে।
আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সোনার মূল্যবৃদ্ধি সামগ্রিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এটি আমদানি ব্যয়কে বাড়িয়ে দেয় এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। বাংলাদেশ প্রধানত আমদানি নির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা সরাসরি দেশের বাজারে প্রভাব ফেলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বাজার পর্যবেক্ষণ এবং নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সোনার দামের আরও ওঠানামা হতে পারে। বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা অব্যাহত থাকলে মূল্য বৃদ্ধির ধারা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমতে শুরু করলে দেশের বাজারেও তার প্রভাব দ্রুত পড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায়, ক্রেতাদের সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। দেশের সোনার বাজারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ অনেকাংশেই নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক আন্দোলন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নীতি এবং বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর, যা আগামী দিনে আরও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।