আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলা চালিয়েছে, যার ফলে কমপক্ষে ২৮ জন নিহত ও ৭৭ জন আহত হয়েছেন। এই হামলা প্রধানত গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এবং গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত হয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের গাজা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, শনিবার গাজার খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকার তিনটি লক্ষ্যবস্তু, গাজা সিটির পূর্বাঞ্চলীয় শুজাইয়া এবং জয়তুনে প্রতিটি এলাকায় একটি করে ভবনে আইডিএফ বোমা বর্ষণ করেছে। এই হামলায় এক পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গাজায় পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
আইডিএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার লক্ষ্যবস্তুসমূহ সমস্তই হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। তারা দাবি করেছে, এই হামলা চলমান যুদ্ধবিরতির শর্তের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে এবং কোনো রকম লঙ্ঘন হয়নি। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, খান ইউনিস এবং গাজা সিটিতে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মোট পাঁচটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হুমকির প্রতিক্রিয়ায় এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আইডিএফের এক কর্মকর্তা জানান, গাজায় যুদ্ধবিরতির শর্তের মধ্যে উল্লেখ ছিল যে হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে। এই শর্তের ভিত্তিতে হামলা পরিচালিত হয়েছে, তাই লঙ্ঘনের কোনো ঘটনার ঘটনা হয়নি।
অন্যদিকে হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলের এই হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, হামলার যুক্তি ন্যায্যতা প্রদানের জন্য খোঁড়া এবং এটি গাজায় উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে। হামাসের মতে, এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হয়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। আলজাজিরার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই ৪০ দিনে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী মোট ৩৯৩ বার যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে।
ফিলিস্তিনের এই সংঘর্ষজনিত পরিস্থিতি স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবন কঠিন করে তুলেছে। হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তবে সীমিত চিকিৎসা সম্পদ ও অবকাঠামোগত ক্ষতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন যে, গাজায় চলমান হামলা এবং যুদ্ধবিরতির নিয়মিত লঙ্ঘন দীর্ঘমেয়াদে মানবিক সংকট ও রাজনীতি-নির্ভর উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
এই হামলার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং চলমান যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের মধ্যে সমন্বয়ক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে।