আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতে তিনি দুই দেশের সরকারের প্রতি ৩৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। এ তথ্য তিনি গতকাল (১৯ নভেম্বর) রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ইউএস-সৌদি ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের সম্মেলনে একটি ভাষণে তুলে ধরেন।
ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরকে লক্ষ্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। তিনি জানান, এমন পরিস্থিতি জানার পর তিনি উভয় দেশকে সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধ চালালে তাদের উপর ৩৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই হুমকির পরে উভয় দেশের নেতারা তাকে জানান যে তারা এ প্রস্তাব পছন্দ করছেন না। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার কাছে এটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না; প্রধান লক্ষ্য ছিল যুদ্ধ রোধ করা।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, এই হুমকি প্রদানের কিছু সময় পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তাকে ফোন করেন এবং জানান যে পাকিস্তান সংঘাত থামাতে রাজি। এর কয়েকক্ষণ পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীও তাকে ফোন করে সংঘাত বন্ধে প্রস্তুতি জানান।
সংখ্যাতাত্ত্বিক ও ইতিহাসভিত্তিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের অনন্তনাগ জেলার পেহেলগাম উপজেলায় বৈসরন উপত্যকায় সন্ত্রাসী হামলা চালায় দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালের নাগরিক ছিলেন। নিহত সকলেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ট্রাফিক অনুসন্ধান ও নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই গোষ্ঠী পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই তৈয়বা সংগঠনের শাখা।
এই হামলার জবাবে ২০২৫ সালের ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানের কিছু এলাকায় সীমিত সেনা অভিযান পরিচালনা করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে পাকিস্তানের ১৩ সেনাসদস্যসহ মোট ৫১ জন নিহত হন এবং ৭৮ জন আহত হন।
পাকিস্তান ২০২৫ সালের ৯-১০ মে পাল্টা ‘বুনিয়ান উন মারসুস’ নামে একটি সেনা অভিযান চালায়। ভারতের সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এ অভিযানে ভারতে ৫ সেনা সদস্য ও ১৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
উভয় দেশের সেনা সংস্থার মধ্যে বৈঠক এবং যোগাযোগের প্রেক্ষিতে ১০ মে প্রথমবারের মতো ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই এবং পাকিস্তানের ডিজিএমও মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লাহ বৈঠক করেন। টেলিফোনিক এই বৈঠকের পর ১২ মে পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয়। পরবর্তীতে আরও দু’দফা দু’দিন করে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে আছে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প আগেও দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য পরমাণু সংঘাত রোধ করেছেন। পাকিস্তানের সরকার তার দাবির সত্যতা স্বীকার করেছে, তবে ভারত এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এ ঘটনাপ্রবাহ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরা নির্দেশ করছেন যে, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সংলাপ ও দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ জোরদার করা জরুরি। এই ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি অঞ্চলীয় স্থিতিশীলতা এবং জননিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।