আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দশমবারের জন্য শপথ নিয়েছেন জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এর সভাপতি নীতিশ কুমার। বৃহস্পতিবার পাটনার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দানে অনুষ্ঠিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কুমার সহ মোট ৩০ জন মন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জেডিইউ এবং বিজেপির নেতৃস্থানীয় মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
নীতিশ কুমারের এই শপথ গ্রহণ ভারতের রাজনীতিতে একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতার পর থেকে কোনো রাজ্যের রাজনীতিক এতবার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেননি। কুমারের নেতৃত্বাধীন সরকার যদি তার পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হয়, তবে তিনি ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে একই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত হবেন।
মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে মোট ৩০ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১৬ জন বিজেপি দল থেকে এবং বাকি ১৪ জন জেডিইউ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। এই মন্ত্রিসভার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরে রাজ্য সরকার নীতিমূলক সিদ্ধান্ত, নীতি প্রণয়ন এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
বিহারের বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ২৪৩টি। এবারের বিধানসভা নির্বাচন দুই দফায়—৬ ও ১১ নভেম্বর—পরিচালিত হয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটার উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬৭ শতাংশ। ১৪ নভেম্বর ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ফলাফল ঘোষণা করেছে। নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বিজেপি-জেডিইউ নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এবং কংগ্রেস-রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতৃত্বাধীন মহাগাঠবন্ধনের মধ্যে।
ফলাফলে দেখা যায়, ২৪২টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে এনডিএ জোটের প্রার্থীরা ২০২টিতে জয়লাভ করেছেন। এর মধ্যে জোটের প্রধান শরিক দল বিজেপি ৮৯টি আসনে, জেডিইউ ৮৫টি আসনে এবং চিরাগ পাসওয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি ১৯টি আসনে জয় পেয়েছে। এছাড়া জিতেন রাম মাঝির নেতৃত্বাধীন আওয়াম মোর্চা পার্টি ৫টি আসনে নির্বাচিত হয়েছে। বিরোধী মহাগাঠবন্ধন জোটের প্রার্থীরা ৩৫টি আসনে জয়লাভ করেছেন।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন মন্ত্রিসভার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এবং রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকারকে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত বিহারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য ধীরে ধীরে পূর্ণ করার জন্য এই মন্ত্রিসভার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নির্বাচন এবং শপথ গ্রহণের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নীতিশ কুমারের দীর্ঘমেয়াদী নেতৃত্ব রাজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। তাছাড়া এনডিএ জোটের প্রভাব রাজ্যের নীতি প্রণয়ন এবং কেন্দ্রীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।