বিনোদন ডেস্ক
থাইল্যান্ডের পাকক্রেট শহরে অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্সের ৭৪তম আসরে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে অংশ নিয়েছেন দুবাইয়ে বসবাসরত ফিলিস্তিনি মডেল নাদিন আইয়ুব। ২৭ বছর বয়সী এই প্রতিযোগী আন্তর্জাতিক সৌন্দর্যবিষয়ক আসরে ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচনা করেছেন।
নাদিন আইয়ুব মূলত মনোবিজ্ঞান ও সাহিত্যে শিক্ষাগত পটভূমিসম্পন্ন। কানাডার ওয়েস্টার্ন অন্টারিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত হন। পাশাপাশি পুষ্টিবিদ হিসেবেও তিনি কাজ করেন। কয়েক বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বসবাসকারী নাদিন ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো মিস ফিলিস্তিনের মুকুট অর্জন করেন, যা তাঁর আন্তর্জাতিক পরিচিতি বিস্তারে ভূমিকা রাখে।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে নাদিন আইয়ুবের পথচলা শুরু হয় ২০২২ সালের মিস আর্থ আসর দিয়ে। সে বছর তিনি শীর্ষ পাঁচ প্রতিযোগীর মধ্যে জায়গা করে নেন, যা তখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ফিলিস্তিনের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অর্জনই তাঁকে আরও বৃহৎ মঞ্চ—মিস ইউনিভার্সে—অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
মিস ইউনিভার্সের বর্তমান আসরে অংশ নিয়ে নাদিন আইয়ুব ফিলিস্তিনের নারীদের শক্তি, সহনশীলতা ও নিজস্ব পরিচয়কে বৈশ্বিক মঞ্চে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। প্রতিযোগিতার এক পর্যায়ে তিনি জানান, তিনি প্রতিটি ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুর প্রতিনিধিত্ব করছেন, যাদের সক্ষমতা ও সংগ্রামকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। তাঁর অংশগ্রহণকে ফিলিস্তিনের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
নারীশিক্ষা ও প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নাদিন আইয়ুব প্রতিষ্ঠা করেন ‘গ্রিন অলিভ একাডেমি’। প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই–ভিত্তিক ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি নারীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালায়। এর পাশাপাশি তিনি শিশুদের সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে কাজ করা একটি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার প্রতিনিধিত্বও করেন। এসব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নাদিন আইয়ুব শুধু সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্রতিযোগী নন, বরং সামাজিক উন্নয়ন ও মানবিক উদ্যোগের সক্রিয় প্রতিনিধিতেও পরিণত হয়েছেন।
মিস ইউনিভার্সের এবারের আসরে নাদিন আইয়ুব নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ পোশাক ও অলংকার ব্যবহার করেছেন। ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী ‘শাতওয়া’ নকশার অনুপ্রেরণায় তৈরি মাথার মুকুট তিনি ধারণ করেন, যা দেশটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। তাঁর পরিধেয় গাউনে জলপাইগাছের মোটিফ ব্যবহার করা হয়েছে—যা ফিলিস্তিনে শান্তি, স্থায়িত্ব ও ভূমির প্রতি অনুরাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। গাউনের নকশায় আরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আল আকসা মসজিদের অবয়ব, যা ফিলিস্তিনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ফিলিস্তিনের প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি হিসেবে নাদিন আইয়ুবের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটির চিত্র ও সাংস্কৃতিক উপস্থিতি তুলে ধরছে। দীর্ঘদিনের সংঘাত ও মানবিক সংকটের মধ্যেও ফিলিস্তিনি জনগণের পরিচয়, প্রতিভা ও সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এমন বৈশ্বিক মঞ্চে। তাঁর অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের তরুণ প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক উন্নয়নের কাজে উৎসাহিত করতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
মিস ইউনিভার্সের এই আসর শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়; বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্বের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। নাদিন আইয়ুবের উপস্থিতি ফিলিস্তিনি নারীদের সম্ভাবনা, শিক্ষা ও মানবিক কাজের গুরুত্বকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরে দেশটির ইতিবাচক ভাবমূর্তি গঠনে সহায়ক হতে পারে।