অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের স্বর্ণবাজারে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মূল্য কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশের বাজারেও দাম নিম্নমুখী হয়েছে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি এক ঘোষণায় জানিয়েছে, সোনার প্রতি ভরিতে সর্বোচ্চ ১,৩৫৩ টাকা পর্যন্ত মূল্যহ্রাস করা হয়েছে, যা শুক্রবার (২১ নভেম্বর) থেকে কার্যকর হবে। এতে করে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের নতুন দাম ভরিতে নেমে এসেছে ২ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ টাকায়।
স্বর্ণের দামের এই পরিবর্তন দেশে-বিদেশে ধাতববাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ ধরে স্বর্ণের দাম অস্থিরতার মধ্যে থাকায় তা স্থানীয় বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। বিশ্ববাজারে সম্প্রতি প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ১০০ ডলারের নিচে নেমে আসে, যা বছরের অন্যতম বড় পতন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় বাজারে তেজাবি বা পিওর সোনার দাম নিম্নমুখী হলে জুয়েলার্স সমিতি দেশীয় বাজারে স্বর্ণের নতুন মূল্য নির্ধারণ করে।
সংশোধিত দামের অধীনে বিভিন্ন ক্যারেটের সোনার মূল্য ভিন্নভাবে সমন্বয় করা হয়েছে। ২২ ক্যারেট স্বর্ণের নতুন মূল্য ভরিতে ২ লাখ ৮ হাজার ১৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের ক্ষেত্রে এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৯৬ টাকা। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরির দাম নামানো হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৩১৮ টাকায়। সনাতন প্রক্রিয়ায় তৈরি এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারিত হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৮ টাকা। স্বর্ণের বিভিন্ন গ্রেডের এই নতুন মূল্য দেশের বাজারে ক্রয়বিক্রয়ের ধারা, আমদানি ব্যয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্ধারিত হয়েছে।
অন্যদিকে, স্বর্ণের দামে পরিবর্তন এলেও রুপার ক্ষেত্রে কোনো সমন্বয় করা হয়নি। রুপার বাজার সাম্প্রতিক সময়ে স্থিতিশীল থাকায় জুয়েলার্স সমিতি বিদ্যমান দাম অপরিবর্তিত রেখেছে। ২২ ক্যারেটের রুপার প্রতি ভরির দাম ৪ হাজার ২৪৬ টাকা বজায় রাখা হয়েছে। ২১ ক্যারেট রুপার দাম ভরিতে ৪ হাজার ৪৭ টাকা এবং ১৮ ক্যারেট রুপা ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম আগের মতোই ২ হাজার ৬০১ টাকা ভরি।
স্বর্ণের দাম কমলেও রুপার দাম অপরিবর্তিত রাখায় বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দামে অস্থিরতা দেখা দিলে দেশীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা মূল্য সমন্বয় করে থাকেন, যাতে বাজার স্থিতিশীল থাকে এবং ভোক্তারা প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রয় করতে পারেন। বর্তমান ঘোষণার ফলে দেশীয় বাজারে স্বর্ণের ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা বাড়তে পারে, বিশেষ করে যখন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের মৌসুম সামনে আসে।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে ওঠানামা করছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের বিনিময় হার, সুদের হারের পরিবর্তন এবং বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ কেনাবেচা—এসব বিষয় স্বর্ণের দামে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দাভাব ও বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণে অনীহা স্বর্ণের চাহিদাকে চাপের মুখে ফেলেছে, যার ফলে দাম নিম্নমুখী হয়েছে।
দেশীয় বাজারে নতুন দাম কার্যকর হলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে। স্বর্ণের দাম কমায় ক্রেতারা অপেক্ষমাণ ক্রয় পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী হতে পারেন। অন্যদিকে, খুচরা বিক্রেতারা নতুন দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্যের মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনবেন। এ ছাড়া স্বর্ণের দাম কমলে স্বর্ণালংকার নির্মাণ ও খুচরা বিক্রির বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়তে পারে।
দেশে স্বর্ণের দাম বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলোর প্রভাব স্থানীয় বাজারেও দ্রুত প্রতিফলিত হয়। বর্তমান মূল্য সমন্বয় স্বর্ণের দেশীয় বাজারকে আবার স্থিতিশীলতার দিকে ফিরিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মূল্যহ্রাসের ফলে বাজারে স্বর্ণের চাহিদা বাড়তে পারে এবং এর ইতিবাচক প্রভাব সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমেও পড়বে।