আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে হোয়াইট হাউজে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘দারুণ’ এবং ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। দুই পক্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভিন্নমত ও উত্তাপ থাকা সত্ত্বেও বৈঠকে শহরের উন্নয়ন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিন্ন মতামত তুলে ধরা হয়।
প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানিয়েছেন যে আলোচনায় নিউইয়র্ক সিটির সার্বিক উন্নয়ন, আবাসন সংকট, খাদ্যের মূল্যসহ নাগরিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। নবনির্বাচিত মেয়র মামদানিকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, শহরের ভবিষ্যৎ উন্নত করার ব্যাপারে উভয়পক্ষই একই লক্ষ্যে কাজ করতে চান।
বৈঠকে ট্রাম্প উল্লেখ করেন যে নিউইয়র্ক সিটির অর্থনীতি ও নাগরিক সুবিধা পুনরুজ্জীবিত করতে শহরের নেতৃত্বের সঙ্গে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কেন্দ্রীয় নগরী হওয়ায় এর উন্নয়ন পুরো দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোর ওপর প্রভাব ফেলে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি নতুন প্রশাসনের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
ট্রাম্প অর্থনীতি সম্পর্কিত কয়েকটি সূচক নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি খাদ্যের মূল্যস্ফীতি কমাতে এবং বাড়ি নির্মাণের গতি বাড়াতে বিভিন্ন নীতিগত উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বৈঠকে তিনি উল্লেখ করেন যে জ্বালানির মূল্য নিম্নমুখী হওয়ায় সাধারণ মানুষের খরচ কমবে, যা শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের বিষয়গুলোতে নতুন মেয়রের সঙ্গে তাঁর মতৈক্য রয়েছে বলেও তিনি জানান।
নবনির্বাচিত মেয়র মামদানি মূলত বহু অভিবাসী অধ্যুষিত একটি শহরের প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে শহরের আবাসন সংকট লাঘব, গণপরিবহনের দক্ষতা বৃদ্ধি, খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং নিম্নবিত্ত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের মতো চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে। ট্রাম্প মনে করেন, শহরের উন্নয়নমূলক কাজ যত বেশি সফল হবে, তা ফেডারেল সরকারের জন্যও ইতিবাচক হবে।
বৈঠকে ট্রাম্প অতীতের রাজনৈতিক উত্তাপ পেরিয়ে কাজের ক্ষেত্রেই গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, শহরের উন্নয়ন একটি যৌথ লক্ষ্য, যেখানে রাজনৈতিক বিভাজন বড় বিষয় নয়। তাঁর মতে, শহরবাসীর জীবনমান উন্নত করা এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা বৃদ্ধিই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে জরুরি।
প্রেসিডেন্ট আরও আশা প্রকাশ করেন যে নতুন মেয়র কেবল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শকেই নয়, বরং বিভিন্ন মতাদর্শিক গোষ্ঠীকে অবাক করতে সক্ষম হবেন। এর মাধ্যমে শহরের নেতৃত্বে নতুন ধরনের অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যেতে পারে। এমন একটি নেতৃত্ব নিউইয়র্কের বহুমাত্রিক জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি অভিমত দেন।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে মামদানির দায়িত্ব নেওয়া শহরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন অধ্যায় সূচনা করবে। বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত এই শহরে মেয়রের নীতিনির্ধারণী ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবাসন বাজারের অস্থিরতা, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, শহরের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব—এসবই আসন্ন প্রশাসনের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে।
ট্রাম্প-মামদানি বৈঠকটি তাই শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাৎই নয়; এটি শহর ও ফেডারেল সরকারের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনাকেও ইঙ্গিত করছে। নিউইয়র্কের মতো বৃহৎ নগরীর উন্নয়ন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নাগরিক সেবার মানোন্নয়নে এই সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।