জেলা প্রতিনিধি
নগরীর লবণচরা এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে রাজু (২৫) নামে এক যুবক আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তিন রাস্তার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানিয়েছে। আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা উন্নত সেবা নিশ্চিতের জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার সময় রাজু তিন রাস্তার মোড় এলাকায় অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি সেখানে এসে তাকে লক্ষ্য করে পরপর গুলি ছোড়ে। দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে খুমেকে ভর্তি করেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজু লবণচরা আশি বিঘা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীরের ছেলে।
ঘটনার পর লবণচরা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। পুলিশ সেখানে চারটি গুলির খোসা উদ্ধার করে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম জানান, প্রাথমিকভাবে এটি পরিকল্পিত হামলা বলেই মনে হচ্ছে। দুর্বৃত্তরা কাছাকাছি দূরত্ব থেকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে এবং হামলাকারীদের শনাক্তে আশপাশের এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলছে।
এ ধরনের ঘটনার পেছনে সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার আগের কয়েক ঘণ্টার গতিবিধি, রাজুর সঙ্গে কারও বিরোধ বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল কি না—এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের সংখ্যা, তারা কোন দিক দিয়ে ঘটনাস্থলে আসে এবং কোন দিক দিয়ে পালিয়ে যায়—এসব বিষয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে তদন্ত অগ্রসর করা হচ্ছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা গুলির খোসা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হবে, যা ব্যবহৃত অস্ত্র শনাক্তে সহায়ক হতে পারে।
ঘটনাস্থলটি নগরীর একটি ব্যস্ত এলাকা হওয়ায় এ ধরনের সশস্ত্র হামলা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতের বেলায় এলাকায় কিছুটা নির্জনতা তৈরি হয়, যা দুর্বৃত্তদের সুযোগ করে দিতে পারে। তারা নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নিয়মিত টহলের দাবি জানাচ্ছেন। এ ছাড়া এলাকাজুড়ে আরও কার্যকর সিসিটিভি নজরদারি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছেন।
খুলনা মহানগরে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সহিংস ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে নানা আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নগরীর আবাসিক ও জনবহুল এলাকায় সশস্ত্র হামলার ঘটনা প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে—অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো, সন্দেহজনক ব্যক্তির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, স্থানীয়ভাবে দ্বন্দ্ব বা অপরাধচক্রের সক্রিয়তা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা।
পুলিশ জানিয়েছে, এই হামলার পেছনে কারা জড়িত তা নির্ধারণে প্রত্যেকটি সম্ভাবনা বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, পূর্বের কোনো বিরোধ অথবা স্থানীয় অপরাধচক্রের ভূমিকা আছে কি না—এসব সম্ভাবনা তদন্তে গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা হবে। এ ছাড়া যেসব সাক্ষী ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন, তাদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের শনাক্তে একাধিক দল মাঠে কাজ করছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে অগ্রগতি আশা করা হচ্ছে।
গুরুতর আহত রাজুর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ঢাকার চিকিৎসকরা পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। পরিবার ও স্থানীয়রা ঘটনাটির দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
এই হামলার কারণ ও এর পেছনের শক্তি নিশ্চিতভাবে জানতে তদন্তের অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সত্য উদঘাটন এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।