আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সমাধানের জন্য ২৮ পয়েন্টের একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। গতকাল ফাঁস হওয়া খসড়া নথিতে দুই দেশকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত মানার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এই শান্তি উদ্যোগটি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিতকরণ, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পুনঃস্থাপন এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন শর্তাবলী নিয়ে গঠিত।
প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার মূল শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং রাশিয়া, ইউক্রেন ও ইউরোপের মধ্যে একটি বিস্তৃত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া। এ চুক্তিতে নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে রাখা হয়েছে। ইউক্রেন এই পরিকল্পনায় সম্মতি জানালে, ১০০ দিনের মধ্যে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের শর্তও রয়েছে।
শান্তি প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে তার সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে এবং এ দুই প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়া, ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের অন্যান্য অঞ্চলে রাশিয়ার দখলাধীন এলাকা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমানে দোনেৎস্ক, লুহানস্কসহ ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পরিকল্পনায় ক্রিমিয়া, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে, ইউক্রেন যদি এই তিন অঞ্চলকে স্বীকৃতি না দেয়, তবুও এগুলো সম্পর্কে কোনো প্রকার আন্তর্জাতিক দাবি রাখার অধিকার থাকবে না।
সেনা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত শর্তে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সংখ্যা ৬ লাখের বেশি হতে পারবে না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি অনুযায়ী দেশটির সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা বর্তমানে ৮ লাখ ৮০ হাজার। এছাড়া, ইউক্রেনকে কোনো অবস্থাতেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি বা ধারণের অনুমতি দেওয়া হবে না।
প্রস্তাবিত চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ ইউক্রেন কখনোই পাবে না এবং ন্যাটো দেশটির ভূখণ্ড বা জলসীমায় কোনো ঘাঁটি স্থাপন করতে পারবে না। তবে ইউক্রেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ লাভের যোগ্যতা রাখবে এবং ইইউ বাজারে প্রবেশাধিকার পাবার সুযোগ থাকবে।
শান্তি প্রস্তাবে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই সম্মতি জানালে, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশসমূহ যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ অন্যান্য রুশ কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে। তবে রাশিয়া যদি শর্ত লঙ্ঘন করে পুনরায় ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়, নিষেধাজ্ঞা পুনরায় কার্যকর হবে।
এছাড়া, রাশিয়াকে জি৭-এর সদস্যপদ পুনরায় দেওয়ার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর জি৮ থেকে বাদ পড়েছিল। নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পুতিন ও অন্যান্য রুশ কর্মকর্তাদের ওপর জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও প্রত্যাহারের শর্ত রয়েছে।
সংক্ষেপে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই ২৮ পয়েন্টের শান্তি পরিকল্পনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান, ভূখণ্ডের স্বীকৃতি, সেনাবাহিনী সীমাবদ্ধতা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের একটি বিস্তৃত কাঠামো প্রস্তাব করছে। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন উভয় দেশের রাজনৈতিক সহমত, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর নির্ভর করবে।