আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সতর্ক করেছেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার কারণে ইউক্রেন মার্কিন সমর্থন হারানোর সম্ভাবনার মুখোমুখি হতে পারে। শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে তিনি জানান, ইউক্রেন “অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, যেখানে হয় আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিতে হবে, নয়তো গুরুত্বপূর্ণ এক মিত্রকে হারানোর ঝুঁকি নিতে হবে।” জেলেনস্কি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ইউক্রেনের ইতিহাসের অন্যতম কঠিন মুহূর্ত।
ফাঁস হওয়া ওই মার্কিন পরিকল্পনায় এমন কিছু শর্ত রয়েছে যা ইউক্রেন আগেই প্রত্যাখ্যান করেছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলো, যেগুলো বর্তমানে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেগুলো ছেড়ে দেওয়া, সেনাবাহিনীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া। এই প্রস্তাবনা কিয়েভের জন্য রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে স্পর্শকাতর হিসেবে দেখা হচ্ছে।
একই দিনে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন যে, মস্কো পরিকল্পনাটি পেয়েছে, তবে এখনও এ নিয়ে ক্রেমলিনের সঙ্গে কোনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, “রাশিয়া নমনীয়তা দেখাতে ইচ্ছুক, তবে লড়াই চালিয়ে যেতেও তারা প্রস্তুত।”
সদ্যকালের এক বৈঠকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেন যে, জেলেনস্কিকে এই পরিকল্পনাটি পছন্দ করতেই হবে। তিনি আরও বলেন, অন্যথায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত অব্যাহত থাকবে।
ইউক্রেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উন্নত অস্ত্র ও সামরিক সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করার সামর্থ্যসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি, বিভিন্ন ধরণের আধুনিক অস্ত্রসজ্জা এবং ওয়াশিংটনের দেওয়া গোয়েন্দা তথ্য। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সরঞ্জামগুলো ইউক্রেনের স্থিতিশীলতা ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
সূত্র মতে, রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। যুদ্ধের শুরু থেকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, এটি ইউক্রেনের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও সামরিক সক্ষমতায় দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
জেলেনস্কির ভাষ্য থেকে স্পষ্ট যে, কিয়েভের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সমর্থনের মধ্যে সঠিক সমন্বয় বজায় রাখা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে যে কোনো সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি কিয়েভ এবং মস্কোর প্রতিক্রিয়ার দিকে নিবদ্ধ। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সতর্কবার্তা অনুসারে, দেশটির নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এখন রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করছে।
সমষ্টিগতভাবে, হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের ভবিষ্যত কৌশলগত অবস্থান, মিত্র রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন এবং সামরিক সক্ষমতার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।