আন্তর্জাতিক ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার জানান, মার্কিন শান্তি প্রস্তাবটি ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের স্থায়ী সমাধানের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, যদি কিয়েভ এই পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে রাশিয়ান বাহিনী তাদের সামরিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে।
পুতিন এই মন্তব্য করেন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে। তিনি বলেন, মার্কিন প্রশাসন এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনীয় পক্ষের পূর্ণ সম্মতি নিশ্চিত করতে পারেনি। রাশিয়া ইতিমধ্যেই মার্কিন শান্তি পরিকল্পনার একটি কপি পেয়েছে, তবে ২৮ ধাপের এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনও বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ হয়নি। পুতিনের মতে, ইউক্রেন এই প্রস্তাবের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, এবং কিয়েভ বা ইউরোপীয় শক্তি এখনও এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেনি যে, রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে এবং শান্তি না হলে অগ্রগতি চলতে থাকবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন যাতে ইউক্রেন এই শান্তি প্রস্তাব গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রস্তাবটিতে ন্যাটো, ভূখণ্ড এবং রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বীকৃতিসহ রাশিয়ার মূল দাবিগুলোকে সমর্থন করা হয়েছে।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ দেশটির প্রায় ১৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। দুই বছর আগে এই আয়তন প্রায় একইরকম ছিল। রাশিয়ার লক্ষ্য ডনবাসের পুরো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, যার মধ্যে রয়েছে দনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং ঝাপোরিজিয়া।
পুতিন আরও বলেন, রাশিয়া আগস্ট মাসে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনের আগে মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে এবং ওয়াশিংটনের অনুরোধে কিছুটা আপস করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, কিয়েভ যদি ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে কুপিয়ানস্কে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টের ক্ষেত্রেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার বলেছেন, তার দেশ মর্যাদা ও স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। পুতিনের মন্তব্যের পর, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, শান্তি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে সামরিক সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, ইউক্রেনীয় শহর কুপিয়ানস্কে রাশিয়ান বাহিনী প্রায় পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। পুতিনের ভাষ্যমতে, যদি কিয়েভ মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ না করে, তবে এ ধরনের সামরিক অগ্রগতি অন্যান্য অঞ্চলেও ঘটতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসানো এবং যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা অনুসন্ধান করা।
মহাদেশীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন বা প্রত্যাখ্যানের ফলাফল সম্ভাব্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউক্রেনের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও ন্যাটোর সংযোগের বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে কোনো চূড়ান্ত সমাধান সহজভাবে আসবে না।
সংঘাতের এই পর্যায়ে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের সামরিক অগ্রগতি, মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন স্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে প্রভাবিত করবে। পরিস্থিতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সামরিক পরিস্থিতি এবং কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে, সংঘাত দীর্ঘায়িত হতে পারে।