আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ইউক্রেনে চলমান সংকট সমাধানের জন্য সম্প্রতি প্রকাশিত ২৮ দফা পরিকল্পনার খসড়া প্রস্তুত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রুবিও বলেন, প্রস্তাবটিতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি শক্তিশালী আলোচনার কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রস্তাবটি মার্কিন সিনেটরদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কিছু সিনেটরের দাবি, এটি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রস্তাব নয়, বরং অন্য উৎস থেকে প্রাপ্ত একটি নথি, যা পরে ইউক্রেনের কাছে পাঠানো হয়েছে। শনিবার হ্যালিফ্যাক্সে এক সম্মেলনে রিপাবলিকান সিনেটর মাইক রাউন্ডস সাংবাদিকদের বলেন, রুবিও তার কাছে এবং অন্য কয়েকজন সিনেটরের কাছে ফোন করে এই বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা কেবল একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছি এবং সেটি একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে ইউক্রেনে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এটি আমাদের সুপারিশ বা পরিকল্পনা নয়।”
রুবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রকাশিত পোস্টে বলেন, “চলমান আলোচনার জন্য প্রস্তাবটি একটি শক্তিশালী কাঠামো হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এতে রাশিয়ার মতামত রয়েছে এবং ইউক্রেনের পূর্ব ও বর্তমান মতও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
এদিকে, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বলেন, “আমরা শান্তি চাই। ইউক্রেন-রাশিয়ার এই যুদ্ধ কখনোই হওয়া উচিত ছিল না। আমরা চেষ্টা করছি যুদ্ধে শাস্তি ও সমাধান আনার। যেভাবেই হোক, এটি শেষ করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যদি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে তিনি তার মতো করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই খসড়া পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল রাশিয়ার হাতে ছাড়তে হতে পারে, তাদের সামরিক বাহিনী সীমিত করতে হতে পারে এবং ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করতে হতে পারে। পরিকল্পনার জবাব দিতে জেলেনস্কিকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যবর্তী আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে। তবে প্রস্তাবের সম্ভাব্য বাস্তবায়ন এবং উভয় পক্ষের সম্মতি না পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকবে। মার্কিন খসড়া পরিকল্পনার প্রকাশ ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন মতামত ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, যা আগামী কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেন সংকট সমাধানের প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থান এবং সিনেটরদের বিতর্কও এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া এবং রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করবে যে ২৮ দফা পরিকল্পনা কবে ও কীভাবে আলোচনায় কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে এবং এ পর্যন্ত বহু মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে। নতুন প্রস্তাবের মাধ্যমে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অবস্থান পুনরায় প্রতিফলিত হচ্ছে।