আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন, তিনি প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন এবং বর্তমানে চিকিৎসার পর সুস্থতা ফিরছেন। নিজের শারীরিক অবস্থার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার মাধ্যমে তিনি যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের পুরুষদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
৫৯ বছর বয়সী ক্যামেরন সম্প্রতি জানান, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের বিষয়টি সাধারণত প্রকাশ্যে আনতে না চাইলেও তিনি মনে করেছেন যে এই তথ্যটি ভাগ করলে অনেকে উপকৃত হবে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, পুরুষরা প্রায়শই স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো উপেক্ষা করেন বা পরে করার জন্য ফেলে রাখেন, যা অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে দেরি ঘটায়। এ কারণেই তিনি নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে তিনি একটি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে পিএসএ (প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন) টেস্ট করান। এই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির অস্বাভাবিক পরিবর্তন শনাক্ত করা যায় এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তার পরীক্ষার রিপোর্টে পিএসএ মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি আসে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত রোগের প্রকৃতি ও ঝুঁকি নিরূপণের জন্য পরবর্তী ধাপ হিসেবে এমআরআই স্ক্যান ও বায়োপসি করা হয়, এবং তার ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণের পর চিকিৎসকরা তাকে ‘ফোকাল থেরাপি’ নামক একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দেন। এই পদ্ধতিতে আল্ট্রাসাউন্ডসহ নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত উপায়ে প্রোস্টেটের আক্রান্ত অংশে সুনির্দিষ্টভাবে তাপ প্রয়োগ বা অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়। ফোকাল থেরাপির অন্যতম সুবিধা হলো, এটি অঙ্গের সুস্থ অংশকে অক্ষত রেখে আক্রান্ত অংশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ তৈরি করে, ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
যুক্তরাজ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারের একটি। প্রতিবছর দেশটিতে প্রায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন বলে সাধারণ তথ্যসূত্রে জানা যায়। বিশেষত ৭৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের মধ্যে এ রোগের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তবে ৫০ বছরের নিচের বয়সী পুরুষদের মধ্যে এর বিস্তার তুলনামূলকভাবে কম হলেও ঝুঁকি সম্পূর্ণ অনুপস্থিত নয়। এছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি গড়পড়তার তুলনায় অনেক বেশি বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণ খুব বেশি দেখা না যাওয়ায় অনেক পুরুষই পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হন না। ফলে রোগটি অগ্রসর হওয়ার আগ পর্যন্ত ধরা পড়ে না। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, বিশেষত নির্দিষ্ট বয়সের পর পিএসএ টেস্ট করানো এ রোগের ঝুঁকি কমাতে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যামেরনের বক্তব্য অনুযায়ী, দ্রুত পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত তার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল, কারণ এর মাধ্যমে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়েছে।
পুরুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। তাদের মতে, মানসিকতা পরিবর্তন করে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক মানসিকতার কারণে পুরুষরা অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলেও তা গোপন রাখেন বা গুরুত্ব দেন না, যা দীর্ঘমেয়াদে জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিচিত রাজনৈতিক বা সামাজিক ব্যক্তিত্বদের অভিজ্ঞতা জনসচেতনতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ডেভিড ক্যামেরনের এই ঘোষণা যুক্তরাজ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার ও পুরুষদের স্বাস্থ্য বিষয়ে আলোচনাকে আরও সক্রিয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যবয়সী ও বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা এবং চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহ বাড়তে পারে। স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তার অভিজ্ঞতা সামনে আসায় অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত হবেন, যা সামগ্রিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করবে।