বিনোদন ডেস্ক
ভারতের বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা ধর্মেন্দ্র ৮৯ বছর বয়সে সোমবার দুপুরে মুম্বাইয়ের নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এ ঘূর্ণিঝড় প্রতিভার ধারক হিসেবে পরিচিত অভিনেতার মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্রের ছয় দশকের এক সোনালি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘোষণা করে।
মুম্বাইয়ের স্থানীয় সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, ধর্মেন্দ্রের বাড়িতে এম্বুলেন্স পৌঁছেছে এবং বাড়ির আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরত্বে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে এবং পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সময় অভিনেতার মেয়ে এশা দেওল উপস্থিত ছিলেন, পাশাপাশি বহু বলিউড তারকার গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে।
ধর্মেন্দ্র পেশাগত জীবনে দীর্ঘদিন ধরে বলিউডে সক্রিয় ছিলেন। হি-ম্যান খ্যাত এই অভিনেতা ১৯৬০-এর দশক থেকে ২০০০-এর পরিপ্রেক্ষিত পর্যন্ত বহু সুপরিচিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনয় কৌশল, শারীরিক সক্ষমতা এবং ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি দর্শকপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। ধর্মেন্দ্রের অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে ধর্মেন্দ্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, যা তাঁর পরিবার তীব্রভাবে অস্বীকার করেছিল। পরে সুস্থ হয়ে তিনি বাড়িতে ফিরেন। উল্লেখ্য, আগামী ৮ ডিসেম্বর তিনি ৯০তম জন্মদিন উদযাপন করার কথা ছিল, এবং বিশেষ এই উপলক্ষে তার স্ত্রী হেমা মালিনী যথাযথ প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন।
ধর্মেন্দ্রের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুধু একজন প্রখ্যাত অভিনেতার জীবনের সমাপ্তি হয়নি, বরং বলিউডের এক যুগান্তকারী চরিত্রেরও বিদায় হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাঁর শিল্পীজীবন এবং চলচ্চিত্রে অবদানের কারণে আগামী প্রজন্মের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রেক্ষাপট হিসেবে থাকবে। তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং চলচ্চিত্রে অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে বলিউড ও ভারতের চলচ্চিত্রজনরা বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
ধর্মেন্দ্র একজন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন; তিনি কেবল একটি সময়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন না, বরং ভারতীয় সমাজের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটেও গভীর প্রভাব রেখেছেন। তাঁর চলচ্চিত্র, চরিত্র নির্মাণ এবং অভিনয়শৈলী দীর্ঘকাল ধরে দর্শক এবং সমালোচকদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত ছিল। বিশেষত ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে তিনি যে ধাঁচের অ্যাকশন এবং ড্রামাটিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা আজও চলচ্চিত্র ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে।
ধর্মেন্দ্রের এই মৃত্যু ভারতের চলচ্চিত্র জগতে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। একাধিক শিল্পী, পরিচালক ও সমালোচক তাঁর জীবন এবং কর্মকে স্মরণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। এছাড়া চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউশনগুলোও তাঁর অবদানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আয়োজন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সমস্ত প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ধর্মেন্দ্র শুধু বলিউডেরই নয়, সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি অমর প্রতিভা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁর মৃত্যু একটি সাংস্কৃতিক ক্ষতির চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হবে, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে তাঁর শিল্পীজীবন অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে থাকবে।