জেলা প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় গাজীপুর–কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে পিকআপভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কৌদালিয়া পেট্রোল পাম্পের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় অটোরিকশাটিতে শিশুসহ একাধিক যাত্রী থাকায় আহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

দুর্ঘটনার পরপরই পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করেন এবং তাঁর সরকারি গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সাময়িকভাবে মহাসড়কের ওই অংশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে আহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুরমুখী একটি পিকআপভ্যান গার্মেন্টসের ঝুট কাপড় বহন করে কিশোরগঞ্জের দিক থেকে আসছিল। একই সময়ে বিপরীত দিক থেকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা গাজীপুরের দিকে যাচ্ছিল। পেট্রোল পাম্প এলাকায় পৌঁছালে দুটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। সজোর ধাক্কায় অটোরিকশাটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যাত্রীরা গুরুতরভাবে আহত হন। দুর্ঘটনার ধাক্কায় রাস্তার দুই পাশেই ছোটখাটো জট সৃষ্টি হয়, যা পরে নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, অটোরিকশাটি একটি গাড়ির পেছনে চলছিল এবং কিছুক্ষণ পরই সামনে থেকে আসা পিকআপভ্যানটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলে আহতদের সহায়তার চেষ্টা করলেও দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার মতো কোনো গাড়ি না থাকায় সময়ক্ষেপণ ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে আহতদের চিকিৎসার জন্য পাঠায়।

দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু করেছে। কর্তব্যরত কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বেপরোয়া গতি বা অসতর্কতার কারণে এ সংঘর্ষ হতে পারে। তবে ঘটনার প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশের তদন্ত চলছে। অটোরিকশায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে শিশুসহ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ওই অঞ্চলে নতুন নয়। গাজীপুর–কিশোরগঞ্জ মহাসড়কটি শিল্পকারখানার কাঁচামাল পরিবহন এবং স্থানীয় যাত্রীদের চলাচলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় নিয়মিতই যানবাহনের চাপ থাকে। বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং এবং রাস্তার নির্দিষ্ট অংশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। এলাকাবাসীর ভাষ্য, পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন অংশটি বাঁকযুক্ত হওয়ায় এবং যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় জড়িত পিকআপভ্যান ও অটোরিকশাটি উদ্ধার করে থানা প্রাঙ্গণে আনা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া চলছে। আহতদের পরিচয় নিশ্চিত হলে তাদের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি গাড়ির চালকদের চালনার নথি, বৈধতা এবং সড়কে তাদের আচরণ যাচাই করা হবে।

এদিকে স্থানীয়দের দাবি, মহাসড়কের ওই স্থানে গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সড়কচিহ্ন এবং সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। বিশেষ করে পেট্রোল পাম্পের সামনে নিয়মিত যানবাহনের ভিড় থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যস্ত মহাসড়কে নিয়মিত ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ, গতিনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার এবং চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এমন দুর্ঘটনার হার কমতে পারে।

পুলিশ বলছে, আহতদের অবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করা যাবে না। তদন্ত শেষে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ ও দায় নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।