জেলা প্রতিনিধি
সিলেট নগরীর বহুদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২৪টি ভবন জরুরি ভিত্তিতে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। নগর ভবনে আয়োজিত ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সোমবার (২৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম জানান, তারা নিজেদের উদ্যোগে সিলেট নগরের ছয় হাজার ভবন জরিপের মাধ্যমে ২৪টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি আরও জানান, প্রকৃতপক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরও বেশি, এবং নগরের প্রায় ৪৪ হাজার ভবনই সার্বিক জরিপের আওতায় আনা জরুরি।
ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শনাক্তকৃত ২৪টি ভবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয়, সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, মান্নান ভিউ, শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী ৫১/৩ সরকারি ভবন, নবপুষ্প-২৬/এ, রাজা ম্যানশন, কিবরিয়া লজ, মিতালী-৭৪, মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়ারিছ মঞ্জিল, হোসেইন মঞ্জিল, শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, নূরানি-১৪, পৌর বিপণি ও শপিং সেন্টার, প্রভাতী হাউস এবং শ্রীধরা হাউস।
২০১৯ সালের ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা এসব ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘদিন সিটি করপোরেশন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এর ফলে সুরমা মার্কেট ও সিটি সুপার মার্কেটসহ সাতটি বিপণিবিতান অল্প সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও পরে কেবল রঙের কাজ করে পুনরায় চালু করা হয়। ছয় বছর পার হলেও তালিকাভুক্ত ভবনগুলো এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
মতবিনিময় সভায় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন-নবী সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলমসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে এখনও অনেক মানুষ বসবাস ও ব্যবসা করছেন, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে। নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে ভবনগুলো ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে অপসারণ কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া নগরের অনেক সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় দুর্যোগের সময় উদ্ধার কার্যক্রমে সমস্যা হতে পারে—এই বিষয়েও বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সকল দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হচ্ছে এবং উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হচ্ছে।
সভায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, জালালাবাদ গ্যাস, আনসার ভিডিপি, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা, ইসলামিক রিলিফ, বিএনসিসি, স্কাউট ও গার্লস গাইডসহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।