অর্থনীতি ডেস্ক
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রায় স্থিতিশীল অবস্থায় পর্যবেক্ষণ করা গেছে। আগের সেশনেই দুই সপ্তাহের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছানোর পর বিনিয়োগকারীরা এখন ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) কী পদক্ষেপ নেবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোর ২টা পর্যন্ত স্পট গোল্ডের দাম ০.২ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪,১৫৪.০৯ ডলারে দাঁড়ায়। ডিসেম্বর সরবরাহের মার্কিন গোল্ড ফিউচারও ০.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৪,১৫১.২০ ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ফেডের ডিসেম্বরে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত বাজারের দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
গোল্ডসিলভার সেন্ট্রালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রায়ান ল্যান জানান, “বর্তমান অবস্থায় ফেড কী পদক্ষেপ নেবে তা পরিষ্কার নয়। তাই বাজার মূলত স্থির রয়েছে। এই সপ্তাহের ফেড বৈঠকের আগে স্বর্ণের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না।”
ফেডের বিভিন্ন কর্মকর্তার ভিন্নমুখী বক্তব্য সুদহার কাটছাঁটের সময় ও মাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। বিনিয়োগকারীরা এই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ডেরিভেটিভ এবং হেজিং সরঞ্জামে নজর দিচ্ছেন। নিউইয়র্ক ফেড সভাপতি জন উইলিয়ামস এবং গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালারের নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন যে, শ্রমবাজারের দুর্বলতা এবং ট্রেজারি বন্ডের আয়ের চাপ বিবেচনায় ডিসেম্বরে সুদহার কমানো যৌক্তিক হতে পারে। বুধবারের সেশনে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ফলন এক মাসের নিম্নমুখী অবস্থার কাছাকাছি ছিল।
তবে কিছু আঞ্চলিক ফেড প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের লক্ষ্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সুদহার কমানো উচিত নয়। এদিকে ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সম্ভাব্য উত্তরসূরি কেভিন হ্যাসেটও মত প্রকাশ করেছেন যে, সুদহার আরও কমানো প্রাসঙ্গিক।
সিএমই’র ফেডওয়াচ টুলের তথ্য অনুযায়ী, বাজার বর্তমানে ডিসেম্বরে সুদহার কমার সম্ভাবনা ৮৫ শতাংশ হিসেবে দেখছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাধারণত সুদহার কমার পরিবেশে ফলনবিহীন স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধি পায়, যা স্বর্ণের বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোও বিনিয়োগকারীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। সাপ্তাহিক বেকারভাতা দাবির সংখ্যা সাম্প্রতিক সময়ে হ্রাস পেয়েছে, তবে নতুন চাকরি সৃষ্টিতে শ্রমবাজার এখনও পিছিয়ে আছে। এছাড়া নভেম্বরে ভোক্তা আস্থা কমেছে, যা চাকরি ও পরিবারের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্ভূত হয়েছে।
অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার স্পট সিলভার ০.৯ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৫২.৮৯ ডলারে, প্লাটিনামের দাম ১.৪ শতাংশ বেড়ে ১,৬১১.০৪ ডলারে, এবং প্যালাডিয়ামের দাম ০.৯ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১,৪০৯.৮৭ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা, ফেডের সুদহার নীতি এবং শ্রমবাজারের গতিশীলতা স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে। আগামী ডিসেম্বরে ফেডের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুর দামের রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।