খেলাধুলা ডেস্ক
নতুন করে চোটে পড়ার পর চিকিৎসকদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাঠে নেমে সান্তোসকে রেলিগেশন অঞ্চল থেকে বের করে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমার। সিরি আ’র চলতি মৌসুমে অবনমন এড়ানোর লড়াইয়ে থাকা ক্লাবটির জন্য এই জয় সম্ভাব্য টিকে থাকার লড়াইকে আরও প্রাণবন্ত করেছে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে বাঁ পায়ের মেনিস্কাসে ইনজুরির কারণে অন্তত স্বল্প সময়ের জন্য মাঠের বাইরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দল অবনমনের ঝুঁকিতে থাকায় নেইমার মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেন। ম্যাচের আগের দিন পর্যন্ত অনুশীলনে অংশ নিয়ে খেলার উপযোগিতা প্রমাণ করেন তিনি।
ম্যাচের শুরু থেকেই সান্তোস আক্রমণে আগ্রাসী ছিল। প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ থেকে ২৫তম মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন নেইমার। ডি বক্সের সামনে সতীর্থের পাস ধরে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিচু শটে জালের দেখা পান তিনি। তার এই গোলেই দলে চাপ কমে আসে এবং খেলোয়াড়রা আরও আত্মবিশ্বাস পায়। দ্বিতীয়ার্ধের ৬৬ মিনিটে নেইমারের নেওয়া কর্নার কিক থেকে হেড করে ব্যবধান ৩-০ করেন জোয়াও স্মিট। ম্যাচে নেইমার একটি গোল এবং একটি অ্যাসিস্ট উপহার দিয়ে দলের জয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।
বল দখলে দুই দলই প্রায় সমান ছিল; তবে আক্রমণে সান্তোস ছিল এগিয়ে। পুরো ম্যাচে তারা ১৭টি শট নেয়, যার মধ্যে সাতটি ছিল লক্ষ্যে। অপরদিকে রেসিফে ১১টি শট নিলেও মাত্র দুটি ছিল লক্ষ্যে। সান্তোসের আক্রমণভাগে নেইমারের উপস্থিতি দলকে আরও ধারালো করে তোলে। ইনজুরির আশঙ্কা থাকলেও তার গতিময়তা ও বল নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক ছন্দ দেখা যায়। ম্যাচ শেষে দলের কোচ জানান, নেইমারের অংশগ্রহণ দলের মানসিক শক্তি বাড়িয়েছে এবং পুরো স্কোয়াডকে অনুপ্রাণিত করেছে।
বর্তমান মৌসুমে সান্তোসের পারফরম্যান্স ছিল ওঠানামায় ভরা। টানা খারাপ ফলের কারণে দলটি রেলিগেশন অঞ্চলে নেমে যায়। সিরি আ-তে অবনমন এড়াতে দলকে শেষ কয়েকটি ম্যাচে জয়ের বিকল্প রাখেনি। এই ম্যাচটি ছিল মৌসুমের শেষ তিন ম্যাচের একটি, যেখানে জয় পেলে অবনমন এড়ানোর লড়াই জোরদার হতো। নেইমারের মাঠে ফেরার সিদ্ধান্ত তাই দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
মেনিস্কাসের চোটে সাধারণত খেলোয়াড়দের বিশ্রামে থাকতে হয় এবং অবস্থা গুরুতর হলে অস্ত্রোপচারও প্রয়োজন হতে পারে। নেইমারের ক্ষেত্রে চোটের মাত্রা কেমন তা নিয়ে চিকিৎসকেরা সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তিনি চোটঝুঁকি নিয়েই খেলতে চান বলে জানান। এ বিষয়ে ক্লাব চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ম্যাচ শেষে নেইমারের হাঁটু পুনর্মূল্যায়ন করা হবে এবং তার শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে আগামী ম্যাচে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই জয়ের ফলে সান্তোস ৩৬ ম্যাচে ৪১ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার ১৫ নম্বরে উঠে এসেছে। হাতে রয়েছে আরও দুটি ম্যাচ, যা তাদের টিকে থাকার পথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অবনমন অঞ্চলে থাকা দলগুলোর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান খুব বেশি নয়, তাই সামনের দুটি ম্যাচে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি।
নেইমারের পেশাদারিত্ব, দলকে বাঁচানোর দৃঢ়তা এবং ইনজুরি ঝুঁকি উপেক্ষা করে মাঠে নামা সমর্থকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে তার স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু বাড়ল এবং সামনের ম্যাচগুলোতে তিনি একইভাবে মাঠে নামতে পারবেন কি না—তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। সান্তোস যদি বাকি দুটি ম্যাচেও জয়ের ধারা বজায় রাখতে পারে, তাহলে অবনমন এড়ানোর লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে।
সিরি আ’র চলতি মৌসুমে নেইমারের ফিরে আসা, চোটঝুঁকি সত্ত্বেও তার লড়াই এবং দলের প্রতি অবদান সান্তোসের শেষ মুহূর্তের সংগ্রামকে নতুন গতিপথ এনে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, তারা শেষ পর্যন্ত শীর্ষ স্তরে নিজেদের অবস্থান বজায় রাখতে পারে কি না।