খেলাধুলা ডেস্ক
২০২১ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারত ম্যাচকে ক্যারিয়ারের অন্যতম উজ্জ্বল মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বাবর আজম। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে পাকিস্তান ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোনো সংস্করণে ভারতকে পরাজিত করে নতুন ইতিহাস গড়ে। বাবর এবং ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানের ব্যাটে গড়া সেই জুটি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের এক অদম্য প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রথম জয় এনে দেয়।
ওই ম্যাচের আগে দুই দেশের মধ্যে বিশ্বকাপে ১২টি মুখোমুখিতে প্রতিবারই জিতেছিল ভারত। দীর্ঘদিনের এই পরিসংখ্যান পাকিস্তানের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করলেও দুবাইয়ের রাতে ভিন্ন কিছুই দেখায় বাবর–রিজওয়ান জুটি। ভারতের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং প্রদর্শন করেন তারা। বাবর অপরাজিত ৬৮ এবং রিজওয়ান অপরাজিত ৭৯ রানে দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত ইনিংস খেলতে থাকা পাকিস্তান ১০ উইকেট হাতে রেখেই ম্যাচ শেষ করে ইতিহাস রচনা করে।
এই জয়ের প্রভাব পাকিস্তানের পুরো টুর্নামেন্টে ইতিবাচকভাবে প্রতিফলিত হয়। ভারতকে হারানোর পর উজ্জীবিত পাকিস্তান দুর্দান্ত ছন্দে থেকে টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছিল। তবে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজিত হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত আইসিসি ট্রফি হাতছাড়া হয়। তবুও ওই ভারত ম্যাচটিকে বাবর নিজের ক্যারিয়ারের সর্বাধিক স্মরণীয় মুহূর্তগুলোর এক বলে উল্লেখ করেছেন।
সম্প্রতি এক ইউটিউব অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাবর বলেন, ভারতের বিপক্ষে জয় তার জীবনে বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে এসেছে। তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের অধিনায়ক হিসেবে ভারতকে প্রথমবার হারানো তার জন্য সম্মান এবং দায়িত্ববোধের এক বিশেষ বহিঃপ্রকাশ। দুই দেশের ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অন্য সব ম্যাচের চেয়ে আলাদা মাত্রা ধারণ করে। রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং দীর্ঘদিনের ক্রিকেট ইতিহাসের কারণে এই ম্যাচ নিয়ে দুই দেশের সমর্থকদের আবেগও অন্য সব ম্যাচের তুলনায় অনেক বেশি।
বাবর আরও বলেন, ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব সবসময়ই উচ্চচাপের পরিবেশ তৈরি করে, আর সেই পরিস্থিতিতে সাফল্য পাওয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্য আলাদা গর্বের বিষয়। তিনি যুক্ত করেন, এমন একটি ম্যাচে বিজয়ী হতে পারা তার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারেও স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য এটি ছিল আত্মবিশ্বাস অর্জনের বড় সুযোগ, যা দলকে পুরো টুর্নামেন্টে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।
এদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন সেঞ্চুরি না পাওয়ার খরা কাটিয়ে বাবর সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সেঞ্চুরি করেন। টানা ৮০৭ দিন তিন অঙ্কে পৌঁছাতে না পারা বাবর এই ইনিংসের মাধ্যমে স্বস্তিতে ফেরেন। নিজের বর্তমান লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, পাকিস্তানকে আরেকটি আইসিসি ট্রফি জিততে সাহায্য করা তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতার পর পাকিস্তান আর কোনো আইসিসি শিরোপা জিততে পারেনি। পরবর্তী টুর্নামেন্টগুলোতে ফাইনালে পৌঁছালেও শেষ মুহূর্তে হার মানতে হয় দলকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানাতে গিয়ে বাবর বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাহিদা পূরণ করতে হলে ফিটনেস এবং দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত কাজ করতে হয়। তিনি জানান, নিজের শরীরের ভিন্ন পরিবর্তন ও চাপ সামলাতে এখন আগের চেয়ে বেশি সচেতনভাবে অনুশীলন করছেন। খেলোয়াড় হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে শারীরিক সক্ষমতা ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি—এমন স্বীকৃতি দিয়েই তিনি জানালেন যে, নিজেকে আরো উন্নত করতে প্রতিনিয়ত কঠোর পরিশ্রম করছেন।
বাবরের বক্তব্য এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স পাকিস্তান দলের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। তার নেতৃত্বগুণ, ব্যাটিং ধারাবাহিকতা এবং বড় মঞ্চে পারফর্ম করার সক্ষমতা পাকিস্তান ক্রিকেটকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। বিশেষ করে আইসিসি ইভেন্টগুলোতে পাকিস্তান যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে মাঠে নামে, সেখানে বাবরের অভিজ্ঞতা এবং টুর্নামেন্ট–নির্ভর মানসিকতা দলকে ভবিষ্যতে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে বলে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
আগামী বছরগুলোর আইসিসি আসরকে সামনে রেখে বাবরের এই প্রস্তুতি এবং জয়ের লক্ষ্য পাকিস্তান দলের সামগ্রিক কৌশলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতো চাপের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক দক্ষতা ধরে রেখে পারফর্ম করতে পারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।