আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফা অঞ্চলে সুড়ঙ্গের ভেতরে হামাসের ৬০ থেকে ৮০ জন যোদ্ধা আটকা পড়েছেন। হামাসের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া আটকে থাকা এই যোদ্ধাদের কাছে খাবার ও পানির সরবরাহ নেই।
গত মাসে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্থাপিত হয়। ওই সময় রাফা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি সেনাদের হাতে থাকলেও এই সুড়ঙ্গের ভেতরে থাকা যোদ্ধারা সেখানে আটকা পড়ে যান। হামাস সূত্র জানায়, আটকে পড়া যোদ্ধাদের সঙ্গে কয়েক মাস ধরেই কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
আটকে পড়া যোদ্ধাদের মধ্যে কয়েকজন সুড়ঙ্গ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় ইসরায়েলি সেনারা তাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়, যার ফলে অন্তত ৩০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। হামাস বলেছে, তাদের যোদ্ধারা কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করবে না। অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আটকা পড়া যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে, যা সম্পন্ন হলে তাদের ইসরায়েলি কারাগারে রাখা হবে।
গত বুধবার হামাস প্রথমবার স্বীকার করে যে তাদের যোদ্ধারা রাফার সুড়ঙ্গে আটকা পড়েছেন। ওই সময় এই সশস্ত্র গোষ্ঠী নিরাপদ প্রস্থানের দাবি জানায় এবং মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে তাদের নিরাপদভাবে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানায়। হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের যোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব ইসরায়েলের। আমাদের সন্তানরা যেন বাড়ি ফিরে আসে, সে বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।”
মধ্যস্থতাকারীরা হামাসের আটকা পড়া যোদ্ধাদের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, হামাসের যোদ্ধাদের তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং তা না হলে কোনো রক্ষা সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুড়ঙ্গে আটকা পড়া হামাসের যোদ্ধাদের পরিস্থিতি গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ও খাদ্য ও পানি সরবরাহের অভাব সুড়ঙ্গে থাকা যোদ্ধাদের শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এছাড়া মধ্যস্থতাকারীদের উদ্যোগ ব্যর্থ হলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা পুনরায় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাফা অঞ্চলে এই সংকট ফিলিস্তিনে চলমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির জটিলতা আরও উন্মোচন করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি দ্রুত কোনো সমাধান না হয়, তাহলে আটকা পড়া হামাস যোদ্ধাদের মৃত্যু এবং সংলাপ ব্যর্থতার ফলে অঞ্চলটিতে নতুন সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।
তবে হামাসের অবস্থান স্পষ্ট, তারা কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করবে না এবং তাদের যোদ্ধাদের জীবন রক্ষা করা তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই পরিস্থিতি ইসরায়েল-হামাস সংঘাতের ভবিষ্যৎ এবং গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে।