খেলাধুলা ডেস্ক

দেশীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বাদশ আসরকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আজ স্থানীয় ক্রিকেটারদের চূড়ান্ত নিলাম তালিকা প্রকাশ করেছে। আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠেয় নিলামের ঠিক একদিন আগে ঘোষণা করা এ তালিকায় বেশ কয়েকজন পরিচিত ও অতীত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের নাম না থাকায় বিষয়টি ক্রিকেট মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিপিএলের গত আসর নানা বিতর্ক, বিশেষ করে স্পট ফিক্সিং ইস্যু ঘিরে সমালোচনার মুখে পড়েছিল। বিসিবি পূর্বেই জানিয়েছিল, ফিক্সিং-সংক্রান্ত অভিযোগে অভিযুক্ত খেলোয়াড়দের এবারের আসরে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে না। স্বাধীন তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তা প্রকাশ করা হয়নি, ফলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা এখনও জানা যায়নি। এরই মাঝে নিলামের তালিকা চূড়ান্ত করার সময় কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারের নাম না থাকা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন জাতীয় দলের সাবেক সদস্য এবং বিপিএলের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এনামুল হক বিজয় ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। গত আসরে বিজয় দুর্বার রাজশাহীর হয়ে এবং মোসাদ্দেক ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেছিলেন। বিসিবি তাদের বাদ দেওয়ার কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তালিকা থেকে নাম না থাকা অন্যদের মধ্যে আছেন আলাউদ্দিন বাবু, মিজানুর রহমান, নিহাদ-উজ্জামান, সানজামুল ইসলাম, মনির হোসেন খান এবং শফিউল ইসলাম।

এবারের নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় মোট ১৫৯ জন দেশীয় ক্রিকেটারের নাম রাখা হয়েছে। ছয়টি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে খেলোয়াড়রা বিভক্ত। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি ‘এ’-তে রয়েছেন মাত্র দুইজন—লিটন দাস ও নাঈম শেখ। তাদেরই সর্বোচ্চ ভিত্তিমূল্যে নিলামে তোলা হবে।

অন্যান্য ক্যাটাগরির বিন্যাস অনুযায়ী ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১২ জন, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১৭ জন, ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ২৬ জন, ‘ই’ ক্যাটাগরিতে ৩৮ জন এবং ‘এফ’ ক্যাটাগরিতে সর্বাধিক ৬৩ জন ক্রিকেটার রয়েছেন।

নিলামের নিয়ম অনুসারে প্রতিটি দলকে নির্দিষ্ট সংখ্যক খেলোয়াড় প্রতিটি ক্যাটাগরি থেকে দলভুক্ত করতে হবে। বিধি অনুযায়ী দলগুলোকে ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে কমপক্ষে ২ জন, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটাগরি থেকে ন্যূনতম ৬ জন, ‘ই’ ক্যাটাগরি থেকে কমপক্ষে ৩ জন এবং ‘এফ’ ক্যাটাগরি থেকে অন্তত একজন খেলোয়াড় দলে নিতে হবে। ফলে নিলামে অংশ নেওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর জন্য দল গঠনে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

বিপিএলের পূর্ববর্তী আসরগুলোর অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, নিলামে দলগুলো সাধারণত শীর্ষ ক্যাটাগরির তারকাদের দলে ভেড়াতে প্রতিযোগিতায় নামে, তবে সামগ্রিক দলীয় ভারসাম্য রক্ষায় নিম্ন ক্যাটাগরির খেলোয়াড়দের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিলামে স্কোয়াডের গভীরতা, খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং আসন্ন মৌসুমের কৌশল—সবই প্রভাব ফেলবে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সিদ্ধান্তে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স পরিমাপ ও ক্যাটাগরি নির্ধারণে বিসিবির পদ্ধতি নিয়ে নানা আলোচনা থাকলেও এবারের তালিকায় তার কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে বাদ পড়া অভিজ্ঞ ও অতীত-সাফল্যধারী কয়েকজন ক্রিকেটারের নাম অনুপস্থিত থাকায় তাদের ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

নিলামের আগে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে দলগুলোর জন্য প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার সুযোগ তৈরি হলো। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক ফর্ম, অভিজ্ঞতা এবং দলীয় প্রয়োজন বিবেচনায় এনে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের স্কোয়াড পূর্ণ করবে।

আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য নিলামের মাধ্যমে দ্বাদশ বিপিএলের দল গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। চলতি আসরের সফলতা নির্ভর করবে দলগুলোর সঠিক পরিকল্পনা, প্রতিযোগিতার মানোন্নয়ন এবং পূর্ববর্তী আসরে আলোচিত বিতর্কগুলোর পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধের ওপর। বিসিবির পক্ষ থেকে ফিক্সিংবিরোধী অবস্থান পুনর্ব্যক্ত হওয়ায় এবারের আসরে শৃঙ্খলা ও সুশাসন বজায় রাখার বিষয়ে বাড়তি নজর দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নিলাম শেষে প্রতিটি দল স্কোয়াড চূড়ান্ত করলে বিপিএলের দ্বাদশ আসর ঘিরে প্রস্তুতি আরও গতি পাবে, যা দেশের শীর্ষস্থানীয় টি-২০ টুর্নামেন্টটির প্রতিযোগিতামূলক মান নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।