আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের লোরালাই বিভাগে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় সময় ভোরের দিকে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে ব্যাপক কম্পন অনুভূত হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং অনেক মানুষ ঘরবাড়ি ও কর্মস্থল থেকে বের হয়ে আসেন। প্রাথমিকভাবে কোনো হতাহতের ঘটনা বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলে স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।
ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৫। তুলনামূলকভাবে কম মাত্রার হলেও এর কম্পন ছিল বেশ স্পষ্ট, যা বিস্তৃত এলাকায় অনুভূত হয়। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎসস্থল ছিল মাটির ২০ কিলোমিটার গভীরে এবং লোরালাই বিভাগের প্রায় ২৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এর উৎপত্তি ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কম্পন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে এবং অনেকে আতঙ্কে বাইরে বেরিয়ে আসেন। ভূমিকম্পটি দীর্ঘস্থায়ী না হলেও আকস্মিক তীব্র কম্পনে মানুষের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসন সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে। জরুরি সেবা সংস্থাগুলোও প্রস্তুত অবস্থায় ছিল, যদিও এখন পর্যন্ত কোনো অবকাঠামোগত ক্ষতি বা আহতের ঘটনা পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেলুচিস্তান ও আশপাশের অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে ঘিরে থাকা টেকটোনিক প্লেটের পরিবর্তনশীল অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে মাঝেমধ্যে ছোট-বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে বেলুচিস্তানের বিভিন্ন জেলা প্রায়ই ভূমিকম্পের হুমকির মধ্যে থাকে, যেখানে পাহাড়ি ভৌগোলিক গঠন এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, পাকিস্তান নানা সময় শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পটি ঘটে ২০০৫ সালে, যখন উত্তরাঞ্চলীয় কাশ্মির এলাকা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের মুখে পড়ে। রিখটার স্কেলে শক্তিশালী সেই ভূমিকম্পে ৭৩ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান উদ্ধার কার্যক্রমের পরও বহু এলাকা পুনর্গঠনে বছরের পর বছর লেগেছিল।
বেলুচিস্তান প্রদেশেও ভূমিকম্পের ইতিহাস দীর্ঘ। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর রাতে সেখানে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই ঘটনায় ছয়জন নিহত এবং কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। ভূমিকম্পের তীব্রতায় বহু বাড়িঘর, বিশেষ করে কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কয়েকদিন ধরে জরুরি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং পরবর্তীতে সরকার দুর্যোগ মোকাবিলা পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসের উদ্যোগ নেয়।
ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষকদের মতে, বেলুচিস্তান অঞ্চলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প নিয়মিতই ঘটে, যা ভূ-স্তরের প্রাকৃতিক চাপ নিরসনে ভূমিকা রাখে। তবে দুর্বল নির্মাণকাঠামো, পাহাড়ি এলাকা এবং জনবসতির ঘনত্বের কারণে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পও কখনো কখনো বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোতে টেকসই ভবন নির্মাণ, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা উন্নত করা এবং জনগণকে নিয়মিত সচেতন করার ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।
শনিবার সকালের ভূমিকম্পটি বর্তমানে বড় কোনো দুর্যোগ সৃষ্টি না করলেও স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর প্রতি আরও সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। বেলুচিস্তানসহ সমগ্র পাকিস্তানে ভূমিকম্প-সহনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
ক্ষয়ক্ষতির খবর না থাকলেও সাম্প্রতিক এই ভূমিকম্প আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে যে অঞ্চলটি প্রাকৃতিকভাবে সক্রিয় ভূমিকম্প রেখার ওপর অবস্থিত। ফলে এখানকার মানুষকে সবসময় সতর্ক থাকা এবং জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।