আন্তর্জাতিক ডেস্ক
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটিয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’ বর্তমানে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশটির আবহাওয়া দপ্তর (ইন্ডিয়ান মেটেরিয়োলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট, আইএমডি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আছড়ে না পড়ে উপকূলের সমান্তরালে উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি উপকূলে প্রবল বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
রোববার (৩০ নভেম্বর) সকালে আইএমডি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’ বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উত্তর শ্রীলঙ্কা ও তামিলনাড়ু উপকূলের ওপর কেন্দ্রীভূত। এটি উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আইএমডি জানিয়েছে, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি কারাইকাল থেকে ৯০ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে, বেদারান্নিয়াম থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, পুদুচেরি থেকে ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং চেন্নাই থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে।
আগের পূর্বাভাসে রোববার সকালে তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা ছিল। তবে নতুন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির উপকূলের সমান্তরালে অগ্রসর হবে। এই সময়ে এটি স্থলভাগের সবচেয়ে কাছাকাছি ৩০ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করবে।
শ্রীলঙ্কার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ (ডিএমসি) জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’-র কারণে দেশটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩২ জনে, এবং এখনও ১৭৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। রাস্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমকে জটিলতর করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধার সংস্থাগুলো উদ্ধার অভিযান, জরুরি চিকিৎসা এবং খাদ্য ও পানি সরবরাহে নিয়োজিত রয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উপকূলে আঘাত হানলে প্রবল বৃষ্টিপাত, তীব্র বাতাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি নদী ও খাল-পুকুরের জলস্তর বৃদ্ধি করে বন্যার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষভাবে, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি অঞ্চলের নিম্নভূমি, উপকূলীয় এলাকা এবং শহরাঞ্চলগুলিতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
মৌসুমি প্রভাব ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইতিমধ্যেই নিরাপদ স্থানে মানুষকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আবহাওয়াবিদরা পরামর্শ দিয়েছেন, আবহাওয়া সতর্কতা, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা এবং জরুরি সতর্কবার্তা মনোযোগ সহকারে অনুসরণ করা অপরিহার্য।
ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’-র গতিপথ এবং প্রভাব সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ চলমান রয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও ও ত্রাণ সংস্থা ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। এই ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পূর্বাভাস ও প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।