বিনোদন ডেস্ক
ব্রিটিশ নাট্যকার ও অস্কারজয়ী চিত্রনাট্যকার স্যার টম স্টপার্ড আর নেই। ৮৮ বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ডের ডরসেটের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্টপার্ডের মৃত্যু সংবাদ রোববার (৩০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক মাধ্যমে জানানো হয়।
টম স্টপার্ড ছিলেন সমকালীন নাট্যসাহিত্যের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি। ‘শেক্সপিয়ার ইন লাভ’-এর জন্য তিনি অস্কার ও গোল্ডেন গ্লোব জিতেছেন। তার লেখনীর মাধ্যমে দর্শকরা নাটকের জগতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, তীক্ষ্ণ রসিকতা ও গভীর দার্শনিক ভাবনা পেতে পারতেন। স্টপার্ডের রচনায় প্রায়শই রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক বিষয়াবলীকে ব্যতিক্রমী রসিকতার সঙ্গে উপস্থাপন করা হত, যা তাঁকে সমসাময়িক নাট্যকারদের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দেয়।
তিনি ‘রোজেনক্র্যান্টজ এবং গিল্ডেনস্টার্ন আর ডেড’ এবং ‘দ্য রিয়েল থিং’-এর মতো নাটকে চরিত্রের জটিলতা, ভাষার বৈচিত্র্য এবং দর্শককে ভাবায় এমন ভাবমূর্তির সমাহার ঘটিয়েছেন। তার রচনায় কেবল বিনোদন নয়, বরং মানব চরিত্রের গভীর বিশ্লেষণ এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রতি সংবেদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে।
স্টপার্ডের মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস এবং রানী ক্যামিলা শোক প্রকাশ করেছেন। তারা এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, “তিনি আমাদের সময়ের সেরা লেখকদের একজন ছিলেন। অসাধারণ প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তিনি সবসময় বিনয়ী ছিলেন। যেকোনও বিষয়কে তিনি কলমের জাদুতে বদলে দিতে পারতেন।”
তার এজেন্সি ইউনাইটেড এজেন্টস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, টম স্টপার্ডকে মনে রাখা হবে তার কাজের উজ্জ্বলতা, মানবিকতা, বুদ্ধিদীপ্ততা এবং ইংরেজি ভাষার প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্য। তিনি সমসাময়িক নাট্যসাহিত্যের অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি অবদান রেখেছেন।
নাট্যকার হিসেবে স্টপার্ডের অবদান কেবল নাট্যাঙ্গনেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তাঁর চিত্রনাট্যগুলোর মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতেও তিনি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ‘শেক্সপিয়ার ইন লাভ’ চলচ্চিত্রটি তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার নিদর্শন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
সমসাময়িক নাট্যসমালোচকরা স্টপার্ডকে উদ্ভাবনী ও মানবিক নাট্যকার হিসেবে অভিহিত করেছেন। ৬০ বছরের কর্মজীবনে তিনি নাট্যসাহিত্যে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তার লেখা নাটকগুলি আজও বিশ্বসাহিত্যে সমসাময়িক নাট্যচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পাঠক ও দর্শকদের কাছে সমাদৃত।
টম স্টপার্ডের মৃত্যু আন্তর্জাতিক নাট্যজগতের জন্য এক বড় ক্ষতি। তার কাজের ধারা, ভাষা ও মানবিক উপলব্ধি ভবিষ্যত প্রজন্মের নাট্যকারদের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। এমন একজন সৃজনশীল ব্যক্তিত্বের অবদান শুধু ইংল্যান্ডে নয়, বিশ্বের নাট্যপ্রেমীদের জন্যও এক অমর স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।