খেলাধুলা ডেস্ক
ভারতের মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে এ বছর দলটি দারুণ পারফর্ম করে ফাইনালে পৌঁছায়। বিশেষ করে সেমিফাইনালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করার পর দলীয় আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। সেই ম্যাচে ভারতের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ধারাবাহিকভাবে বড় রান না পেলেও সেমিফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন তিনি। তার এই পারফরমেন্সই দলকে ফাইনালে তুলতে সহায়তা করে। তবে এই সাফল্যের পরপরই এক ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হন ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটার। অজানা বিভিন্ন উৎস থেকে বিপুল সংখ্যক বার্তা ও ফোনকল আসতে শুরু করলে তিনি বাধ্য হয়ে মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ সরিয়ে ফেলেন।
সেমিফাইনালে ম্যাচ জয়ের পর জেমাইমাকে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য সমর্থক। এর মধ্যে পরিচিত মুখ ছাড়াও অজানা অনেক নম্বর থেকে ফোনকল ও বার্তা আসতে থাকে। ম্যাচের উত্তেজনা কাটিয়ে ফাইনালের প্রস্তুতিতে মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু লাগাতার ফোন বেজে ওঠায় মনোসংযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপটি আনইনস্টল করাই ছিল তার কাছে একমাত্র সমাধান।
ঘটনা সম্পর্কে ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেমাইমা জানান, সেমিফাইনালের পর থেকেই হঠাৎ করে তার ফোনে কল ও বার্তার বন্যা শুরু হয়। তিনি বলেন, ম্যাচটি শেষে ফোনের রিং থামছিলই না। বিভিন্ন অজানা নম্বর থেকে আসা বার্তার সংখ্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে হোয়াটসঅ্যাপে প্রায় এক হাজারেরও বেশি বার্তা জমা পড়ে। এ ধরনের পরিস্থিতি তার জন্য অস্বাভাবিক ছিল না, তবে এত বড় ম্যাচের ঠিক পরে এমন প্রবল চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।
জেমাইমা জানান, ম্যাচের আবেগ তখনও পুরোপুরি কাটেনি। হঠাৎ করে এত বেশি মনোযোগ ও অভিনন্দন বার্তা তাকে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। টুর্নামেন্টের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখা তার জন্য ছিল অত্যন্ত জরুরি। তাই তিনি সব ধরনের বিভ্রান্তি এড়াতে অস্থায়ীভাবে হোয়াটসঅ্যাপ সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তার মতে, ফাইনালের আগে সুসংগঠিত প্রস্তুতি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে ভাবার সুযোগ ছিল না।
ফাইনালের আগে ফোনে বার্তা দেখা বা কল ধরার মতো কোনও বিষয় তার মনোযোগ নষ্ট করুক—এটা কোনওভাবেই তিনি চাননি। সেই কারণেই তিনি শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরত্ব বজায় রাখেননি, বরং ফোন ব্যবহারও সীমিত করে ফেলেন। তিনি জানান, ফাইনাল ম্যাচের পূর্ববর্তী সময়টিতে শুধুমাত্র দলের প্রয়োজনীয় আপডেট ও কৌশলগত আলোচনাতেই অংশ নিয়েছেন। ব্যক্তিগত কোনও বার্তা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি নিজেকে প্রকাশ করেননি।
ফাইনালে ট্রফি জয়ের পর জেমাইমা আবার হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করেন এবং তখন গিয়ে তিনি শুভেচ্ছা বার্তা ও অভিনন্দন জানানোর উদ্দেশ্যে পাঠানো হাজারো বার্তার উত্তর দেন। তিনি বলেন, এখন যখনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খুলছেন, সেখানে নিজেকে অথবা দলের সঙ্গে তার বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও দেখতে পাচ্ছেন। সমর্থক, বিশ্লেষক এবং ক্রিকেটপ্রেমীরা এখনও তার সেমিফাইনালের ইনিংস নিয়ে আলোচনা করছেন।
জেমাইমার অভিজ্ঞতা আধুনিক যুগের পেশাদার ক্রীড়াবিদদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরে। বড় সাফল্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপ ও অতিরিক্ত মনোযোগ অনেক সময় খেলোয়াড়দের মানসিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। টুর্নামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে এসে সেই চাপকে মোকাবিলা করতে সতর্ক সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন হয়। জেমাইমা সেই সিদ্ধান্তটি যথাসময়ে নিতে পেরেছেন, যা ভারতের সফল অভিযানে তার ভূমিকা আরও শক্তিশালী করে।
বিশ্বকাপ শেষে এখন ভারতের নারী ক্রিকেট দল ভবিষ্যৎ সিরিজগুলোকে সামনে রেখে নতুন পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। জেমাইমার মতো ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা দলের জন্য মানসিক প্রস্তুতি ও পেশাদার আচরণের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করবে বলে cricketing circles মনে করছে। তার সেমিফাইনালের পারফরম্যান্স এবং কঠিন পরিস্থিতিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্যও অনুপ্রেরণার উদাহরণ হয়ে থাকবে।